প্রসঙ্গ : প্রিয়া সাহার নালিশ: বাংলাদেশের ভাগ্য লেখা হয় “র” এর সদর দপ্তর থেকে

626 Visited

22 Sep
প্রসঙ্গ : প্রিয়া সাহার নালিশ: বাংলাদেশের ভাগ্য লেখা হয় “র” এর সদর দপ্তর থেকে

শেখ মহিতুর রহমান বাবলু : ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার নালিশ সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে সবচাইতে আলোচিত ও সমালোচিত সংবাদ।তার কলংকিত রাষ্ট্রদ্রোহী মিথ্যা অভিযোগের ঘটনা ঘটার প্রথম দিনে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন “প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সাথে কোনো ভাবেই একমত হবেন না। দেশের নাগরিক হয়ে দেশের বিরুদ্ধে এ রকম অসত্য উদেশ্যমূলক এবং দেশদ্রোহী বক্তব্য রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে এবং সেই প্রক্রিয়া চলছে”।

কিন্তু ঘটনার দ্বিতীয় দিনে কোন এক অদৃশ্য সুতোর টানে আওয়ামীলীগের ভোল পাল্টে যায়।৯০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ায় দলটি । কথা বলার সময় ভীষণ সতর্কতা অবলম্বন করে তারা। প্রিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে নিরাপত্তা প্রদানের ঘোষণা আসে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পক্ষ থেকে।

 

প্রিয়া সাহা প্রথম কোনো ব্যক্তি নন যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে গিয়ে ভয়ঙ্কর মিথ্যা নালিশ করে সাহায্য চেয়েছেন ।এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরণের কান্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাতার থেকে প্রিয়া সাহাই প্রথম। 
শুরু থেকে বিষয়টা গভীর ভাবে লক্ষ করছিলাম আমি। বিশেষ করে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী বলে খ্যাত চেতনার ফেরিওয়ালারা কি করেন এটা দেখার প্রকট আগ্রহ ছিল আমার ।
ড. গওহর রিজভি , ড. জাফর ইকবাল,শাহরিয়ার কবির , সুলতানা কামাল ,শ্যামল দত্ত ,খুশী কবির ,আপু উকিল ,পীযুষ বন্দোপাধ্যায় ও মুন্নীসাহা সহ সংখ্যালঘু সুবিধাভোগী চেতনাবাজরা সংখ্যা লঘুদের নিয়ে কিছু একটা হলেই হাউমাউ করে ওঠে।যদি ব্যাপারটা মুসলমানদের বিপক্ষে যায় তবে তো আর কথাই নেই। কিন্তু প্রিয়া সাহার ব্যাপারে তারা নীরব। তারা দেশে আছেন মনেই হচ্ছে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু বলার চেষ্টা করলেও সে বলায় মিনমিনে ভাব থাকছে বেশি।ঘুরে ফিরে তারা প্রিয়া সাহার পক্ষে অবস্থান নিতে চেষ্টা করছেন ।

আমার চোখ থমকে গেল স্বেচ্ছায় নির্বাসিত লন্ডন প্রবাসী কলম সন্ত্রাসী আব্দুল গফফার চৌধুরীর”প্রিয়া সাহা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ” ( পূর্ব পশ্চিম ২৩ জুলাই ২০১৯) লেখা দেখে। তিনি সাধারণত ভারত থেকে তার অজ্ঞাতনামা বন্ধুর তথ্যের ভিত্তিতে মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্প কাহিনী লেখেন। এবার তিনি তা করেন নি। তিনি খবর নিয়ে দেখেছেন গত ৩০ ডিসেম্বরে বাংলাদেশে রাতের আঁধারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নমিনেশন না পাবার ক্ষোভে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের কাছে । গফফার চৌধুরীর এ তথ্য কিভাবে পেলেন তার কোনো সূত্র তিনি প্রকাশ করেন নি। তিনি তার লেখায় দেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কারণ হিসাবে বিএনপি জামাতের শাসনামলকে দায়ী করেছেন।

গফফার চৌধুরীর ভুলে গেছেন ১৯৭২ সালে রমনা কালীমন্দির দখলের মাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ধর্মীয় অত্যাচারের সূত্রপাত হয়েছিল। সে সময় বিএনপি’র জন্ম হয়নি। জামাতের সংগঠন তখন বাংলাদেশে ছিল না।

আমাদের দেশে অনেক উপজাতি আছেন। তাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। দেশে ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘আদিবাসী’ রয়েছে। যাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আজও মেলেনি। কারণ হিসাবে বলা যায় বঙ্গবন্ধুই তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন “তোমরাও বাঙালী হইয়া যাও”। একটি জাতি গোষ্ঠীকে মায়ের ভাষা ত্যাগ করে বাঙালি হবার আহবান সংখ্যালঘুদের উপর সুবিচার মনে হয় না। এদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের সূচনা ঠিক তখন থেকেই। 

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজন করেছিল একটি সেমিনার। সমাবেশের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন” এ অনুষ্ঠানে তথ্য সন্ত্রাসী 
গফফার চৌধুরী তার ভাষণের এক জায়গাতে বলেন “বাংলাদেশে যদি ৫ হাজার হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা থাকতো ,তাহলে শেখ মুজিবের এভাবে মৃত্যু হতো না”। তার মতে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তেমন কোন ভূমিকা ছিল না হিন্দুদের । থাকলেও তা ছিল খুব নগন্য। 
এ কথা পরিপেক্ষিতে তদানীন্তন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী একটি কলাম লেখেন। “গফফার চৌধুরী এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানাতে চায়” শিরোনামে এ লেখাটি প্রকাশিত হয় সে সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবে। ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সালে। 
মিঃ চক্রবর্তী বলেন ” প্রায় সময় আপনার (গফফার চৌধুরীর )লেখা ও সভা সমাবেশের বক্তব্য মনগড়া এবং ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে পাঠক ও শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করার একটা প্রবণতা আপনি লালন করে থাকেন । এবার নতুন করে হিন্দু সম্প্রদায়কে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত করার এবং খুব নোংরাভাবে তাদেরকে ছোট করার পায়তারা চালাচ্ছেন। আর এ থেকে আমার মনে হচ্ছে আপনি সুকৌশলে গোটা হিন্দু সম্প্রদায়কে এ দেশের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে চান”।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট বদরুদ্দীন ওমর ,গোলাম মোর্তুজা ,ফরহাদ মাজহাব ,আহমেদ সফা,কাদের সিদ্দিকী সহ অগণিত সাংবাদিক লেখক কলামিস্ট গফফার চৌধুরীর মিথ্যাচার ও আপত্তিকর উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রমান সহ প্রতিবাদ করেছেন বহুবার । কিন্তু এতে কোনো পরিবর্তন হয় নি তার । গোলাম মর্তুজা একবার লিখলেন “গফফার চৌধুরী তার লেখায় অনেক সময় ৮/১০ জনের রেফারেন্স টানেন। যাদের অধিকাংশ মৃত। যাও ২/১ জন বেঁচে আছেন তারা পরের দিনই এই জ্ঞানপাপীর লেখার প্রতিবাদ জানান। 

রাষ্ট্রীয় প্রভাব ,রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থে বা দলের স্বার্থে ক্ষমতায় থাকার জন্য বা ক্ষমতায় যাবার জন্য সংখ্যালঘুদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় হামলা, হত্যা ,নির্যাতন ,বাড়ি ঘর দখল ,অগ্নিসংযোগ ,ধর্মীয় উপসনালয় ভাঙচুর ইত্যাদির ঘটনা ঘটে থেকে।।এ ধারাবাহিকতা পৃথিবীর সর্বত্রই আজ বিদ্যমান ।দেশ কাল পাত্র ভেদে ভিন্নতা থাকলেও সংখ্যালঘুদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি আদিকাল থেকে হয়ে আসছে। এটা অনেকটা প্রকৃতিগতও বটে। 
যেমন বনের ছোট পশু শক্তিশালী বড় পশু দ্বারা নির্যাতিত। পানির নিচের দৃশ্য একই।পৃথিবীর দুর্বল দেশ প্রভাবশালী বড় দেশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। বড় গাছের ছায়ায় ছোট গাছ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। ইত্যাদি ।
আজ থেকে ৪০/৪২ বছর আগে আমেরিকাতে কালো আর সাদারা একই স্কুলে লেখাপড়া করতে পারতো না।কালো ছেলে মেয়েরা যে স্কুলে পড়তো ,সাদারা ঐ স্কুলের ধারে কাছেও ঘেঁষতো না।
মাত্র কয়েক বছর আগেও ব্রিটেনের হোটেল রেস্টুরেন্টের সামনে লেখা থাকতো কুকুর ও কালো মানুষের প্রবেশ নিষেধ । শুরুতে ব্রিটেনের অভিবাসীরা চরমভাবে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে।আলতাব আলীদের মতো অনেকে জীবন দিয়েছেন। এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রত্যেক অভিবাসীকে পরিবারের অন্নান্ন সদস্যদেরকে এদেশে আসার সহজ আইন প্রণয়ন করলেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠিন করা হলো আইন । তাতে নির্যাতন ও হামলার পরিমান কমিয়ে আনা গেছে সত্য । কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

উন্নত বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই স্থানীয় ও অভিবাসীদের মধ্যে অঘোষিত বেতনের বৈষম্য আজও দৃশ্যমান । তুলনামূলকভাবে সততা ও যোগ্যতার সাথে কাজ করেও অনেকে স্থানীয়দের মতো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। এটাই সত্য এটাই বাস্তবতা।এ সব বাস্তবতা মাথায় নিয়েই পৃথিবীর সর্বত্রই সংখ্যালঘুরা বসবাস করছে এবং করবে। যা বুঝার জন্য নিউটন বা আইন্সটাইন হবার দরকার পড়ে না। 

পাকিস্তান আমলে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ঐ নির্যাতনের ধারাবাহিকতা ক্ষমতাসীনদের হাত ধরেই অব্যাহত থেকেছে । কিন্তু বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে দেশের সংখ্যালঘুরা সংখাগরিষ্ঠতাদের চাইতেও বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।ঢাকায় অবস্থিত বিদেশী দূতাবাস গুলির অধিকাংশই সংখ্যালঘুদের দখলে।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০ ভাগ সংখ্যালঘুরা কর্মরত আছেন। সংসদ সদস্য,প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী , প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ,মন্ত্রী,আমলা ,বিচারবিভাগ ,বঙ্গভবন ,শিক্ষামন্ত্রণালয় ,দুদক ,রাজস্ব বিভাগ থেকে শুরু করে সর্বত্রই দেশের নীতি নির্ধারক থেকে পিওন পর্যন্ত কোথায় নেই সংখ্যালঘুরা ? এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নীতি নির্ধারণী বড় বড় পোস্ট দখল করে আছে তারা। এ সবই বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অবদান। 
বাংলাদেশে ৯ ভাগ সংখ্যালঘুদের মধ্যে ৩৭ ভাগ সরকারি কাজে নিয়োজিত।এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৩০ ভাগ মুসলমানের মধ্যে মাত্র ৩ ভাগ সরকারি চাকরীর সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। 

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গোটা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ নবম এবং ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। একই সময় প্রকাশিত অন্য এক সরকারি তথ্য মতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশি রেমিটেন্স যোদ্ধারা প্রবাস থেকে ১৩ মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন । পক্ষান্তরে ভারতীয়রা শুধু বাংলাদেশ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে। 

২০১৫ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিবি’র রিপোর্ট অনুযায়ী অন্তত ৫ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন । যার সংখ্যা এখন ১২ লাখে পৌছেছে। এদের বেশিরভাগই অবৈধ।ভ্রমণ ভিসায় এসে দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কেবল মাত্র দেশে যোগ্য লোক না পাওয়া গেলেই বিদেশী নিয়োগ দেয়া যাবে। বিদেশিদের উপার্জনের ৩০ ভাগ কর প্রদানের নিয়মও আছে । 
নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ভারতীয়দের নিয়োগের ফলে দেশে যেমন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এগুলো নিয়ে টু শব্দটি করার সাহস বাংলাদেশ সরকারের নেই।কারণ বাংলাদেশের মসনদে কে থাকবে কে থাকবে না এ সিদ্ধান্ত আসে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর সদরদপ্তর থেকে। 

কোন দেশকে ধ্বংস করতে হলে পারমাণবিক বোমা লাগেনা। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারলেই সেই জাতি ধ্বংস হয়ে যায়।’ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে বাকীগুলোও একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যেত ।কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।যার পরিণতি দেখতে ৫/১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। 

সুতরাং আর মাত্র কয়েক বছর পরেই দেশের প্রশাসন চালাতে ভারত থেকে বৈধ ভাবেই জনশক্তি আমদানি করতে হবে। 
এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশের হিন্দুরা খুশি হচ্ছে না কেন ? 

প্রিয়া সাহার দাবি, দেশ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩ কটি ৭০ লাখ মানুষ ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ হয়েছে। এতো বিশাল পরিমান সংখ্যালঘু গায়েব হওয়ার বিষয়টি এক বিশাল গণহত্যার বিষয়।বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জাগো হিন্দু সহ এ ধরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার বক্তব্যের সাথে এক মত পোষণ করে বলেছে এ সংখ্যার সত্যতা পেতে হলে ১৯৪৭ সাল থেকে গণনা করতে হবে।

সত্য যে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ফলে বিরাটসংখ্যক সংখ্যালঘু ১৯৪৭ সাল থেকে দেশত্যাগ করেছে। দেশভাগের পরপরই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে লোকবিনিময়ের চুক্তি হয়। এই চুক্তি নেহরু-লিয়াকত চুক্তি নামে খ্যাত। এই চুক্তি অনুযায়ী পূর্বপাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে প্রচুর ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভারতে চলে যায়। ভারত থেকেও প্রচুর বিহারি ও বাঙালি মুসলিম আসে পাকিস্তানে । তারা কেউ গুম হয়নি।
হিন্দুদের ভারতে চলে যাবার প্রবণতা এখন থেমে গেছে বলা যাবে না। গতবছর আমি ভারত সফর কালে প্রচুর হিন্দুদের সাথে কথা বলেছি।তাদের দেশ ত্যাগের কারণ জানতে চেয়েছি। এদের অনেকের কর্তারা বাংলাদেশে চাকরি বা ব্যবসা করেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা থাকেন ভারতে।

তাদের মতে ধর্মীয় দিক তো আছেই তার চাইতেও তারা বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সংকিত। বাংলাদেশের চাইতে কলকাতার জীবনযাত্রা কম ব্যায়বহুল। এখানে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আছে যা বাংলাদেশে নেই। যেমন সাধারণ একজন চাকরিজীবীকে ব্যাঙ্ক টেলিফোন করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। জমি জমার দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম। কারো এক টুকরো জমি থাকলে সরকার বাড়ি করতে সাহায্য করে থাকে।চাইলে যে কেউ একটা চাকরি জোগাড় করে নিতে পারে। শিক্ষা জীবনে একটু ভাল করলেই চাকরি নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। তাছাড়া ভারত থেকে নেয়া ডিগ্রি সারা দুনিয়াতে সমাদৃত।
তারা বলেন মেয়েদের জন্য এখানে রয়েছে বিশেষ সুবিধা। লেখাপড়ার জন্য তারা পায় কন্যাশ্রী নামের শিক্ষা ভাতা। বিয়ের জন্য রূপশ্রী ভাতা। সরকারি কলেজে বিনা মূল্যে পড়ার সুবিধা ইত্যাদি।অনেকে বললেন বাংলাদেশে ছেলে মেয়াদের পড়াশুনার জন্য যে অর্থ খরচ হতো ঐ পয়সা দিয়ে দিব্বি এখানে আমাদের সমস্ত মাসের খরচ হয়ে যায়। এদের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পরিচিত কেউ বাংলাদেশ থেকে কখনো গুম হবার তথ্য মেলেনি।তবে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে চলে যাওয়া অনেক হিন্দু আবারো বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। যাদের অধিকাংশই সিলেট অঞ্চলে বসবাস করছেন। 

প্রিয়া সাহার দাবি মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্ট দ্বারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। যদি একথা সত্য হবে তাহলে ভারতের নির্যাতিত মুসলমানেরা বাংলাদেশে আসে না কেন ? তাছাড়া যে কোনো বিবেচনায় বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার মুসলিম বান্ধব নয়। সংখ্যালঘুরা তাদের ফিক্সড এসেট। স্থায়ী ভোট ব্যাঙ্ক।তাদের উপর নির্যাতনের বিচার এ সরকার করবে না এ কথা কি কেউ বিশ্বাস করে ?

সত্য যে সারা বিশ্বে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত। চীন ,মিয়ানমার ,ভারত সহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা দারুন সংকটের মধ্যে জীবন যাপন করছে।মিয়ানমারে একটা জাতিকে দেশ থেকে জ্বালাও পোড়াও করে অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করলো।এ অন্যায়ের কার্যকর প্রতিবাদ কেউ করেনি । ভারত এতো বড় দেশ তারা একটি রোহিঙ্গাকেও জাগা দিলো না। বরং তাদের দেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিনানমারে না পাঠিয়ে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করলো। রোহিঙ্গা ও চীনের সংখ্যালঘুদের একটাই অপরাধ এরা মুসলমান। 

বর্তমান মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের উগ্রহিন্দুদের হাতে একের পর এক ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানরা।প্রতিদিন গণমাধমে এ দৃশ দেখছে সবাই। মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। গোহত্যা বন্ধ নিয়েও চলছে তুলকালাম। একের পর এক মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে বসে। ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী হয়েও সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।প্রতিদিন বিনা দোষে নিরপরাধ মুসলমানদের নির্যাতনের মাধ্যমে ভারত তাদের হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের এই জুলুম-নির্যাতন যখন তুঙ্গে। ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশ থেকে সাম্য ও সহাবস্থানের শিক্ষাগ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।কিন্তু তারা সেটা না করে বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়ার পরও সকলের সহবস্থান নষ্ট করার জন্য ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর দালাল প্রিয়া সাহাকে দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পায়তারা করছে ।কারণ ভারত বাংলাদেশকে সিকিম বানাতে চায়। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত চায় বাংলাদেশের ভাগ্য “র” এর কার্যালয় থেকে লিপিবদ্ধ করতে। এটাই তাদের স্বপ্ন। এটাই তাদের লক্ষ্য ।
ভারতের এসব উপনিবেসিক মতলব বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কিছু বুদ্ধিজীবী ও প্রচার মাধ্যমকে হাত করেছে । এই ধরণের বুদ্ধিজীবী ,প্রচার মাধ্যম ও সংবাদকর্মী জোগাড় করতে “র” এর বেশি বেগ পেতে হয় না। বিদেশ ভ্রমণের টোপ ,কিছু নগদ অর্থ ,ক্ষেত্রবিশেষে কেবল মদ ও মেয়ে মানুষ দিলেই মিলে যায় অনেককে। প্রযুক্তির এই স্বর্ণ যুগে এ সব তথ্য যখন ফাঁস হয়ে যায় ,তাতে দেখা যায় বাংলাদেশের অনেক নামি দামি বুদ্ধিজীবী ও গণমাধমেরে নাম উঠে আসে “র” এর গোপন অর্থ সাহায্যের তালিকায়। 

বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ, বিদ্রোহ বা নাশকতা শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না; সেটি হয় কোনো একটি সাজানো নাটক , কথা বা লেখনীর সাহায্যে। মানব ইতিহাসে বড় বড় নাশকতাগুলো এখন ঘটেছে এভাবে।  
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতি , শিক্ষা , সংস্কৃতি ,দেশপ্রেম,,সামাজিক মূল্যবোধ , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করে থাকে। কিন্তু প্রচারণার ধুম্রজালে অন্ধ হয়ে দেশের মানুষ এই সত্যটি প্রথমে বুজতে পারে না। যখন বুজতে পারে /পারবে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। 
লেখক : Editor : Newslife24.com

London : 27.07.2019