(ভ্রমণ কাহিনী )লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকত ভ্ৰমণ ছিল আনন্দদায়ক

222 Visited

22 Sep
(ভ্রমণ কাহিনী )লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকত ভ্ৰমণ ছিল আনন্দদায়ক

শেখ মহিতুর রহমান বাবলু :   আমাদের মিটিং পয়েন্ট ইস্ট লন্ডন মসজিদ । ২৫ অগাস্ট রোববার।  সকাল ৮.২০। আকাশ  থেকে নেমে আসছে গা ভাসানো মিষ্টি মিষ্টি রোদ।  লন্ডনের বাংলাদেশী পাড়া খ্যাত  হোয়াইটচ্যাপলের ইস্ট লন্ডন মসজিদের সামনে  গিয়ে দেখি সেখানে একটা সাদা বাস দাঁড়িয়ে আছে।পাশে রেজাউল করিম মৃধা।তার গলায় ঝুলছে বাঁশি । হাতে একগাদা কাগজ।ভ্রমণ সঙ্গীদেরকে তিনি নাম দেখে বাসে  উঠাচ্ছেন। ভীষণ ব্যাস্ত মৃধা। মেজাজও গরম। কিছুক্ষন পর  নীল রঙের  আরো একটা বাস এসে দাঁড়ালো রাস্তার ওপারে।ইতিমধ্যে অনেকেই চলে এসেছেন। সব যাত্রীকে বাসে  চেপে বসতে বলা হলো। বাস ছাড়বে ন'টায়। যথা সময় সবাই এলেও দুটো ফ্যামিলির দেখা নেই । টেলিফোনে যে যার মতো যোগাযোগ করছে তাদের সাথে। আয়োজকদের চোখে মুখে বিষাদের চাপ দৃশ্যমান ।দেখতে দেখতে পার হলো প্রায় ১ ঘন্টা। অবশেষ ঐ পরিবার দুটি এসে পৌঁছালো সকাল ১০ টার দিকে । দুটো বাস প্রায় শতাধিক পরিবার নিয়ে  ছুটে চললো লন্ডন থেকে ৮১ মাইল  দূরে কেন্ট সীমান্ত সংলগ্ন ইস্ট সাসেক্স এর ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে ।প্রাইভেট গাড়িতেও  যাচ্ছেন অনেকে।

 

এটা  লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বার্ষিক ট্রিপ।প্রতিবছর তারা এ ধরণের আয়োজন করে। ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলা গণমাধম কর্মীদের জন্য। দিনটির অপেক্ষায় থাকে অনেকে। আমি নিজেও। নীল বাসে আমার জাগা হলো । সাথে  পরিবার নেই। তারা গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে ইতালি ও জার্মান চষে বেড়াচ্ছে। সাদা বাসের দায়িত্বে ছিলেন সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, ট্রেনিং সেক্রেটারী ইব্রাহিম খলিল এবং ইভেন্ট সেক্রেটারী রেজাউল করিম মৃধা।নীল বাসে  সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের ও কমিউনিকেশন সেক্রেটারী এম এ কাইয়ুম। কিছুক্ষনের মধ্যে পরিবেশন করা হলো সকালের নাস্তা। সেটা শেষ হতে না হাতেই আবিষ্কার হলো বাসে এসি কাজ করছে না। ড্রাইভারকে বলা হলো । কিন্তু এই মুহূর্তে সেও অসহায় ,কিছুই করার নেই তার । এদিকে আহমদ ম‌য়েজ ভাই ক্ষেপে একাকার।  কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। উত্তপ্ত তাপমাত্রা।  প্রচন্ড গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সবার ভ্রমণ । বাসের জানালা খোলা যায় না। ভিতরে  ভ্যাপসা গরমের  কারণে ভ্রমণসঙ্গীদের  প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত।শরীরে গরম লাগছে আগুনের হলকার মতো। কোথাও যেন স্বস্তির ছোঁয়া নেই। শিশু ছাড়াও গরমে সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়ছেন মহিলারা।অনেকে মাথায় ও মুখে পানি ছিটাচ্ছে।রাকিব ভাইয়ের ছোট্ট সোনামনি  ইলমার মুখ গরমে লাল হয়ে গেছে।  এদিকে পর্যাপ্ত পানিও নেই সবার সাথে।আহমদ ম‌য়েজ ভাইয়ের   বিরামহীন প্রতিবাদের মুখে পিছন থেকে জুবায়ের ভাই উঠে এলেন। ঠান্ডা মেজাজে কথা বললেন ড্রাইভারের সাথে। সাফ জানিয়ে দিলেন এ বাসে আমরা ফিরছি না। কোম্পানিকে বলে নতুন বাসের ব্যবস্থা করতে বললেন তিনি। পথের এই বিড়ম্বনাকে লাঘব করতে ওমর ফারুক, জিয়াউর রহমান সাকলাইন ও  আরো অনেকে গান ধরলো । কিন্তু ভাগ্য দেবী সেখানেও সুপ্রসন্ন হলেন না। বাসের সাউন্ড সিস্টেমে গন্ডগোল। মাইক্রোফোন ওয়ান করলেই প্রচন্ড আওয়াজ হচ্ছে। এবার  সত্যি সত্যি  বিরক্তি উগরে দিলো  ভ্রমণ সঙ্গীরা। ভ্রমণের  এটাই সম্ভবত সবথেকে খারাপ দিক। 

আমাদের দুরাবস্থা সাদা বসে জানানো হলো। কেউ ছবি তুলে কেউ  ভিডিও করে পাঠাচ্ছে সেখানে।মুঠো ফোনে বার্তার  লেনদেন তো আছেই।  ওমর ফারুক ও সঙ্গীরা খালি গলায় গেয়ে চলেছেন । মাঝে মাঝে মোবাইলেও বেজে উঠছে ধামাকার সব গান। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ভুলে থাকার  চেষ্টা আর কি। ইস্ট লন্ডন থেকে ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকত দুই ঘন্টার পথ। ইতিমধ্যে তিন ঘন্টা পার হয়ে গেছে। আমরা গন্তব্যের বেশ কাছে। মোটর ওয়ে থেকে নেমে আমাদের বাস চলছে আঁকা বাঁকা সরু পথ ধরে ।যতদূর চোখ যায় শুধু গাড়ির মিছিল ।কচ্ছপের গতিতে চলছে আমাদের বাস। কেউ কেউ বাস থেকে নেমে হেটে চলেছেন । রাস্তার ডান   দিকে সনামধন্য বিশাল রয় গল্ফ ক্লাব।বাদিকে  হাজার হাজার হলিডে কটেজ, ক্যারাভান ইত্যাদি।অবশেষে সমুদ্র সৈকতের মূল ফটকে এসে  পৌছালো আমাদের বাস । ড্রাইভার  নামতে বললেন। জুবায়ের ভাই কথা বলে জানতে পারলেন সাদা বাসটি আরো সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু না বুঝার আগেই আমরাও ছুটলাম সেদিকে। দেখতে দেখতে মূল সৈকত এলাকা পার হয়ে গেলো। বিপদ এখনো আমাদের পিছু ছাড়েনি বুজতে বাকি রইলো না।  

 

গাড়ির লম্বা লাইন ঠেলতে ঠেলতে একসময় দেখা মিললো সাদা বাসের। সেটাও পার্কিং করার জন্য উপযুক্ত জাগা নয়। তাড়া তাড়ি বাস থেকে নামতে বললেন ড্রাইভার। দুপুরের খাবার ,বিভিন্ন  ইভেন্ট এর জন্য পুরস্কার  ,বাচ্ছাদের পুশ চেয়ার  ,সকলের গাট্টি বোস্কা এতো সব নিয়ে কোথায় ঠাই মিলবে আমাদের ? সাদা বাসে আনন্দ ফুর্তি হয়েছে বেশ । সেখানে  এসি থাকলেও পায়ের কাছে চলছিল হিটার বললেন অনেকে। সুতরাং ঐ বাসেও  খুব শান্তি ছিল বলা যাবে না। পশ্চিমাদের  কাছে রৌদ্রদীপ্ত দিনগুলোর একটা বিশেষ কদর আছে। একঘেয়েমি শীত প্রধান অথবা শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত মানুষগুলো  তাই গরম আবহাওয়ার ছোঁয়া পেতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে মোটেও দ্বিধা করে না। আবহাওয়া, মানুষ এবং পরিবেশ  সবই যেন তাদের কাছে নতুনত্ব নিয়ে আসে। এরা  সাধারণত সমুদ্র সৈকতে  আসে একটু উষ্ণ রৌদ্র স্নান ও নোনা পানির  স্বাদ পাবার জন্যে। প্রকৃতির কাছে নিজেকে খোলা মেলা তুলে দেবার জন্যে।এবার গ্রীষ্মে ব্রিটেনের  আবহাওয়া  তাদের  নিরাশ করেনি। গোটা গ্রীষ্ম জুড়ে প্রকৃতি  তার সীমাহীন বৈচিত্র্য দিয়ে বারবার তাদের মন জয় করেছে। একে তো গ্রীষ্মের ছুটি তার উপর সুন্দর আবহাওয়া। সব মিলিয়ে আজ বুঝি কেউ আর বাসায় নেই। সবাই ছুটে  এসেছে সমুদ্র সৈকতে। গন্তব্যে এসে এমনি মনে হচ্ছিলো আমার। পশ্চিমারা ভীষণ ভ্রমণ পিপাসু। ছুটি পেলেই তারা আর ঘরে থাকতে চায়না। বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশ্যে। এ সময় টুর ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির উপরও থাকে বাড়তি চাপ।সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও চড়া মূল্য দিয়েও ভালো কিছু পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সেরকম ঘটনারই শিকার। তাদের আন্তরিকতা বা চেষ্টার কোনো কমতি ছিল বলা যাবে না।  

সবাই ক্ষুধার্ত। বাস থেকে নেমেই দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হলো।একপাশে ধু ধু  করছে গমের খেত। অপর পশে গাড়ি চলার  রাস্তা। রাস্তার সাথেই কংক্রিটের দেয়াল। তার পর বিশাল বড় বড় পাথর ,ছোট ছোট নুড়ি পাথর,সোনালী বালু সবশেষে সাগরের নোনা জ্বল।  কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে দুপুরের আহার গ্রহণ করে সোজা সৈকতের অপার সৌন্দর্যের দিকে চলে গেলেন । পিচঢালা সড়ক তাপ দিয়ে দিয়ে মরিচিকা ছড়াচ্ছে ।সেখান  থেকে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে গিয়ে দেখি ছোট্ট একটা তাবুর পশে চেয়ারে নবাবের বেসে বসে আছেন রসিক বক্তা  তাইছির মাহমুদ। তরমুজ আঙ্গুর পানি সহ অনেক কিছু আছে তার সাথে।সবাই ধরা ধরি করে তাবু ও দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইছির ভাইকে সাগর কিনারায় নেয়া হলো। 

আকাশ ভরা প্রখর সোনালী রোদ।মাথার উপর দিয়ে উড়ছে গাং চিল।  জ্বলের বুকে রঙের খেলা। সোনালী বালুর উপর পদচিহ্ন মুছে যাচ্ছে জোয়ারের পানিতে। আকাশের কোথাও কোথাও ভেজা ভেজা তুলা ।সূর্য যেন সৈকতের  জলরাশিতে রূপা ফলাচ্ছে!  বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৈকতে ঘুরতে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে  উলঙ্গ অর্ধউলঙ্গ নর নারীর পদচারণায় মুখরিত  সাগর সৈকত । মানুষ এসেছে, তাই ঢেউয়েরাও আচড়ে পড়ছে সাগর তটে! যেন আমাদেরকে  স্বাগত জানাতেই ছন্দে ছন্দে ঢেউয়ে এই হাসির খেলা। উত্তাল সাগরের কি রূপ, তারই যেন প্রমাণ মেলে  এই সৈকতে। মাটির কোনো গন্ধও মেলে না এখানে। পথের বিড়ম্বনা ও গরমের এত আয়োজন, তবুও অস্বস্তি নেই আমাদের কারো ভেতরে । থাকবেই বা কেন? এত কাছে সাগর থাকলে কোনো কিছুই কি আর সুখ কেড়ে নিতে পারে ?

প্রায় সবাই পানিতে নেমে পড়েছে। আমি ছবি তুলছি ভিডিও করছি।প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট  এমদাদুল  হক চৌধুরীর পানিতে নামার কোনো লক্ষণ দেখছি না। জিনসের প্যান্ট হাটু পর্যন্ত গুটিয়ে তিনি তদারকী করছেন। এনটিভি ইউ  কে'র হেড অফ নিউজ আকরাম হোসাইন খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে চিৎকার করতে করতে গভীর সমুদ্রর দিকে দৌড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে সমুদ্র পাড়ি দেবে সে। ম‌য়েজ  ভাই একবার পানিতে আবার ডাঙায়। ইব্রাহিম খলিল ওমর ফারুক সাঁতার দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।এম এ মতিন, নজরুল ইসলাম বাসন,মেজবাহ জামাল,তাইছির মাহমুদ,আলাউর রহমান শাহীন,ফয়সাল মাহমুদ, আলী বেবুল,আব্দুর রহিম রন্জু,শামছুর রহমান সুমেন,সাজু আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, এম এ হান্নান, ,রুপি আমিন  সহ আরো অনেকে যে যার মতো  ফুর্তিতে  মেতে উঠেছেন ।এসএ টিভির ইউকে ব্যুরো চিফ হেফাজুল করিম রাকিব তার পরিবার নিয়ে কোথায় যেন ভেগে গেছে।  প্রেস ক্লাবের সাধনসম্পাদক মোঃ জুবায়ের  হাফপ্যান পরে সাগর সৈকতে  ঘোরা ঘুরি করছেন । এদিকে মৃধা  বাঁশি ফুকিয়ে যাচ্ছেন। মুখে বলছেন ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আগ্রহীরা চলে আসুন। ফুটবল খেলার জন্য গোলপোস্ট, সীমানা ,মধ্যমাঠ সবই রেডি।কিন্তু খেলা শুরু করা গেলো না। ইতিমধ্যে জোয়ারের পানিতে মাঠের অর্ধেক তলিয়ে গেছে। সবাই নিজ নিজ ব্যাগ নিয়ে উপরের দিকে দৌড়াচ্ছে। জোয়ারের পানিতে ভাসছে অনেকের জুতা স্যান্ডেল । খুব দ্রুত পানি বেড়ে চলেছে। 

আমাদের মহিলা ভ্রমণ সঙ্গীরা রীতিমতো হতাশ। কেউ কেউ বড় বড় পাথরের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে। অনেকে আবার আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ দূরত্বে। ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকতের এই অংশটি একশ্রেণীর পশ্চিমাদের জন্যে। যারা একটু নিরিবিলি খোলামেলা সমুদ্র স্নান করতে চায়। এখানে কোনো ওয়াশ রুম নেই। শরীরের লোনা পানি ও বালুকণা ধোয়ার মিষ্টি ফ্রেস পানির ব্যবস্থাও  চোখে পড়লো না। সুতরাং আমাদের মহিলাদের জন্য এমন জাগাতে লম্বা সময় থাকা বেশ কঠিন । শুরু হলো কাবাডি ,হাড়ি ভাঙা ,দড়ি টানা টানি,সাঁতার  ইত্যাদি নানা ধরণের প্রতিযোগিতা । এতে হার জিতের চাইতে উপভোগ করার মানুসিকতা বেশি ছিল সবার। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। বড় বড় পাথরের পাদদেশে শুরু হলো ভ্রমণ সঙ্গীদের একটি করে বিনামূল্যে দেয়া রাফেল ড্র।পুরস্কার বিতরণী। আলাপ চারিতা ইত্যাদি।রাফেল ড্র ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলেন  ইফতেখার আহমেদ রনি, জিনাতআরা শারমিন, খিজির হায়াত খান কাউসার , ওমর ফারুক, জিয়াউর রহমান সাকলাইন, আহমেদ ময়েজ,ফিরোজ আহমেদ বিপুল, এম এ হান্নান, জাকির হোসেন কয়েস,  মোহাম্মদ জোবায়ের,  তাইছির মাহমুদ , মোস্তফা কামাল মিলন, জিনাতআরা শারমিন , হাসি খান, সুজিয়া চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ বিপুল , রানা হামিদ ,সারোয়ার হোসেন , নজরুল ইসলাম বাসন।

আমিও পেয়েছিলাম রাফেল ড্র'র  দুটো  পুরস্কার।সকলকে রাফেল ড্র'র একটা করে টিকেট দিলেও আমি দুর্নীতি না করেই পেয়েছিলাম তিনটে। সুতরাং দ্বিতীয় পুরস্কারটা কৌশলে ওমর ফারুককে গোচিয়ে দেবার অপচেষ্টা  করেও পার পাইনি। তাই  একটা পুরস্কার নিয়ে খুশি থাকে হয়েছিল আমাকেও । গোধূলি লগ্নে এই বিশাল সমুদ্র বক্ষে মিলে যায় অসীম আকাশ।  আকাশ থেকে নেমে  সাগর  কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে  সূর্য। তবে সূর্য ঘুমিয়ে পড়লেও সৈকতের পাহারায় জেগে ওঠে চাঁদের আলো। এ এক অপূর্ব দৃশ্য। গ্রীষ্মে এখানে সন্ধ্যা হয় বেশ দেরিতে। তাই  আমাদের আর সূর্যাস্ত দেখা হলো না ।  দুটো বাস দুর্বার গতিতে ছুতে চললো  লন্ডনের উদ্দেশ্যে।পিছে পড়ে রইলো স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্বার সমুদ্র সৈকত।তাইসির ভাইয়ের চুটকীর যন্ত্রনায় ইব্রাহিম খলিল অন্য বাস থেকে এবার আমাদের বসে পালিয়ে এসেছে। সবাই ক্লান্ত। কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে। আকরাম ও ইব্রাহিমের উপস্থাপনায় শুরু হলো গান ,নাচ ও কৌতুক । ময়েছ  ভাইয়ের  কাওয়ালি, হিন্দি ,উর্ধু গান  সবাইকে সতেজ করে তুলেছে।ইব্রাহিম খলিলকে শিল্পা মাহফুজুর রহমানের উত্তরাধিকারী খেতাবে ভূষিত করা হলো। তার হেড়ো গলার গানে পুলকিত সবাই। তার গান শুনে একে একে সবাই গান গাইবার সাহস করলেন ।

আগামীকাল সকালে অনেকের কাজে থাকায় বাস কোথাও না থামার সিদ্ধান্ত হলো। ফিরতি  ট্রিপে হালকা নাস্তার ব্যবস্থা হলে ভালো হতো অভিমত অনেকের । এবার কিন্তু  আমাদের দুটি বাসের রংই সাদা। ট্যুর কোম্পানি পুরাতন বাস পরিবর্তন করে নতুন বাস পাঠিয়েছে।গান,নাচ ও আনন্দ ফুর্তির তালে তালে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো টেরও পেলাম না।আমরা ইস্ট লন্ডন এসে পৌছালাম। এমদাদ ও জোবায়ের ভাই সকলকে ধন্যবাদ জানালেন। চা কফি অফার করলেন জোবায়ের ভাই। মনের বীণায় বাজতে থাকলো মৌসুমি ভৌমিকের ঐ গান, আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছোআমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনা বালি তীর ধরে বহু দূর বহু দূর হেটে এসেছআমি কখনো যাইনি জ্বলে  কখনো ভাসিনি নীলেকখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাংচিলে....।

লন্ডন : ০১.০৯.২০১৯ লেখক : কলামিস্ট ,লেখক ও  Editor : Newslife24.com