আমার মাকে রক্ষা করুন প্লিজ

853 Visited

22 Sep
আমার মাকে রক্ষা করুন প্লিজ

শেখ মহিতুর রহমান বাবলু  ::  ছ 'সপ্তাহ  পর কদিন হলো  নিরাপদে London ফিরেছি।  এবার দেশের বাইরে শ্রীলংকা ভারত ও বাহরাইন গিয়েছিলাম। 

দেশে গেলে প্রায় প্রতিবার সুন্দরবন যাওয়া পড়ে। এ বনের নৈসর্গিক রূপ আমাকে টানে। অনেকে বলে  দিনে অন্তত ছ'বার রূপ বদলায় সুন্দরবন। আমি বলি  রূপবদলানো তার প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার । ইউনেস্কো ঘোষিত  বিশ্ব ঐতিজ্যের অন্তর্ভুক্ত এ যায়গাটির  সুষ্ট ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভীষণ উপকৃত হতে পারতো। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেত  দেশের বিশাল জনগোষ্টি। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের কোল  ঘেষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবনকে  রক্ষা বা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার না করে এটা ধংসের নীলনকশা নিয়ে ব্যাস্ত দেশের শাসক গোষ্ঠী। উদ্দেশ্য প্রতিবেশী ভারতকে খুশী রাখা। বাকশালী কায়দায় চিরকাল ক্ষময়তায় থাকা। হায়রে বাংলাদেশ।

International একটা food conventation এ যোগ দিতে ভারত গিয়েছিলাম।  শ্রীলংকা আমার সফর সূচিতে ছিলোনা। প্রবাস জীবনে শ্রীলংকার অনেক বন্ধু বান্ধব পেয়েছি। এ দেশটির প্রতি ছিলো আমার অনন্য আকর্ষণ। সুযোগ পেয়ে তাই ঘুরে এলাম শ্রীলংকা। 

আমাদের দেশের সরকারী কর্মকর্তা ,শিল্পী,সাহিত্যিক ,বুদ্ধিজীবী  ও এক শ্রেণীর  কালো টাকার মানুষেরা বিদেশ ভ্রমণ করেন যথাক্রমে রাষ্ট্রীয় অর্থ ,অন্যের টাকা বা কালোটাকা খরচ করে। এরা আসলে ভ্রমণ করেন না। ফুর্তি করেন। গোটা পৃথিবী যেন এক বিচিত্র। একথা ওদের অনেকে বোঝেন না। দেশে ফিরে গল্প করেন ভারত,নেপাল,লন্ডন সিঙ্গাপুর ,রোম নিউ ইয়র্ক ঘুরে এলাম। আসলে একটা দেশের যা দেখার তা তারা দেখেন না। কলকাতায় অনেক বাংলাদেশীর সাথে কথা হলো। তাদের অনেকে বছরে ৪/৫ বার বা তারও  বেশি বার  কলকাতা আসেন শপিং বা ট্রিটমেন্ট এর  জন্য । কিন্তু কখনো শান্তি নিকেতন যান না ,যান না উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক জাগাতে । মার্কেটিং করেই লেজ তুলে  মহানন্দে ফিরে যান দেশে।

আমার বিবেচনায় দেখার বিষয় হবে অন্যরকম। প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও একটা দেশের কৃষ্টি, কালচার ,সভ্যতার নিদর্শন ,সেদেশের শহর গ্রাম ,মানুষের স্বভাব, চরিত্র ,রং ,চেহারা আকৃতি প্রকৃতি ভাষা ইত্যাদি না দেখলে, গ্রামের ও শহরের মানুষের সাথে একান্ত ভাবে না মিশলে চিন্তায় যেমন ভরপুর হয় না মস্তিস্ক ,তেমনি ষোল কলায় পূর্ণ হয় না ভ্রমণ। 

ভারতের অনেক পরিবারের সাথে ওঠাবসা করেছি একান্ত আপনজনের মতো। এদের মধ্যে কেউ কেউ আমার  শান্তি নিকেতনের ভ্রমণ সঙ্গী হয়েছিলেন। 

কলকাতায় অনেক বাংলাদেশী পরিবার দেখলাম। এদের কর্তারা বাংলাদেশে চাকুরী বা ব্যবসা করেন। গিন্নিরা ভারতে থাকেন ছেলে মেমে নিয়ে। প্রশ্ন জাগলো দেশে সংখ্যা লঘুদের এখন স্বর্ণযুগ। তার পরেও ওরা কেন ভারত মুখী।  এসব  অনেক পরিবারের সাথে কথা বলেছি। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চায়না তারা। তাই গোপন ক্যামেরায় তাদের ছবি আর সাক্ষাৎকার ধারণ করেছি। যা পরবর্তীতে ভ্রমণ কাহিনীর ভেতর  স্থান  করার ইচ্ছা রইল। 

বর্তমান বাংলাদেশে যথেষ্ট যোগ্য মানুষ নেই। গার্মেন্টস ,পর্যটন ,প্রশাসন সহ অনেক ক্ষেত্রে  ভারত ও শ্রীলংকা জাগা করে নিয়েছে।ভারতীয়দের অনেকের ভিসা নেই ,নেই কাজের অনুমতি। তারপরেও প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে তারা দিব্বি কাজ  করে যাচ্ছে। এদিকে দেশের লক্ষ কটি মানুষ বেকার। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তারা । ঢাকায় জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক উর্ধতমর সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বললেন শুধু গুলশান এলাকায় হাজার  হাজার ভারতের অবৈধ কর্মজীবী নাগরিক বসবাস করেন। তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক অজানা কারণে   ভারতের বেপারে সরকার নীরব। 

নাহিদ সাহেব দেশের শিক্ষার মান যে পর্যায়ে নিয়েছে তাতে আগামী ১০ বছর পর দেশে ডেস্ক জবের জন্য ভারত বা অন্য দেশ থেকে জনশক্তি আমদানী করতে হবে। এমনটি মনে করেন দেশের শঙ্কালঘুরা। তাই যাদের সঙ্গতি আছে  তারা নিজ  সন্তান বা ভবিষৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও  লেখার জন্য  বেছে নিয়েছেন  ভারতকে ।

সেকুলার ,বামপন্থী বা নাস্তিকরা প্রকাশ্যে  ধর্মের শত্রুতা  করে । আঘাত করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির উপর। তাদের এই জঘন্য মানুষিকতা ঢাকার জন্য তারা মানবতার গান গায়। দেশের খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তির নাটক করে । সেই দিক বিবেচনায় রেখে দেশের এক শ্রেণীর মানুষের শিক্ষা মন্ত্রী নাহিদ এর উপর প্রত্যাশা ছিল   বেশ। কিন্তু তিনি   এক অদৃশ্য সুতোর টানে  দেশের শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন।দেশকে পিছিয়ে দিয়েছেন শত শত বছর। তাই দেশের মানুষ আজ হতাশ। কিন্তু তাদের যে কিছুই করার নেই। কথা বললেই গুম না হয় খুন।

 বাংলাদেশ থেকে এখন ভারতের ভিসা পাওয়া খুব সহজ। যে কেউ ইচ্ছা করলেই পেয়ে যায় এক বৎসরের মাল্টিপুল ভিসা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো কলকাতাতেও এখন গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী পাড়া। সেখানে প্রতিটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে বাংলাদেশী আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার মানুষ। বাংলাদেশী পাড়ার হোটেল ভাড়া আকাশ চুম্বি। হোটেলে জীবন সম্ভোগের সব উপকরণ হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। 

ভারতের বিভিন্ন খ্যাতনামা হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার দেখেছি। জানার তাগিদে অনেক জাগাতে রোগীদের সাথে দোভাষী হয়ে ডাক্তারের মুখোমুখি হয়েছি। প্রতিটা হাসপাতালে ৭০ থেকে ৯০ ভাগ রোগী বাংলাদেশী। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছে তারা। ঠোঁটে পিঁপড়া কামড়ালেও পায়ে ঘুঙুর পরে নাচতে নাচতে বাংলাদেশিরা ছুটছে ভারতে। এটা দেশের এক শ্রেণীর মানুষের জন্য ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে বাংলায় লেখা বড় বড় সাইনবোর্ড টানিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে।  রাখা হয়েছে সব অঞ্চলের  আঞ্চলিক বাংলা ভাষায় কথা বলার মতো সুন্দরী ষোড়শী। বাইরে বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট ও মানি এক্সচেঞ্জ দিয়ে ঠাসা। এ সব জাগাতে বাংলাদেশিদের কদরও বেশ। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এটা মিনি বাংলাদেশ। 

হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা আনার চটকারী বিজ্ঞাপন খচিত সাইনবোর্ড মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আসে মানি এক্সচেঞ্জ অফিস। এখানে বাংলা টাকার চাইতে ইউরো ,পাউনড ,শিলিং ডিনার,ডলার  সহ বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেশী। 

ইউরোপের প্রতিটা বিমান বন্দরের শুল্ক বিভাগ বহিরাগত  যাত্রীদের কাছে  জানতে চায় কত  কারেন্সি ক্যারি করছে সে। একটা নিদৃষ্ট পরিমান কারেন্সির বেশী কারেন্সি নিয়ে ভ্রমণ একেবারেই বেআইনী অথচ বাংলাদেশে এগুলো দেখার কেউ নেই।

প্রতিদিন দেশ থেকে ১০/১৫ টি ফ্লাইট, ডাইরেক্ট বাস,ট্রেন,প্রাইভেট কার ইত্যাদিতে চেপে হাজার হাজার বাংলাদেশী ভারত যাচ্ছে। এরা কি পরিমান অর্থ সাথে নিতে পারবে এর কোনো নিয়ম কি দেশে নেই। 

প্রবাসীদের রক্ত আর ঘামে ভেজা  বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যারা হলি খেলে তারা কি দেশের বন্ধু  না শত্রু ? কে দেবে আমার এ প্রশ্নের জবাব ? হায়রে আমার বাংলাদেশ। 

দেশ হচ্ছে প্রতিটা নাগরিকের মা। মায়ের শরীরের রক্ত মাংশ অস্তি মজ্জা যারা কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের রুখতে আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এটা করতে হবে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার খাতিরে। 

লেখক : সম্পাদক Newslife24.com, TV উপস্থাপক