ব্রাইটনের সমুদ্র সৈকত হতাশ করলেও আই ৩৬০ দেখে সবাই মুগ্ধ অভিভূত

993 Visited

22 Sep
ব্রাইটনের সমুদ্র সৈকত হতাশ করলেও আই ৩৬০ দেখে সবাই মুগ্ধ অভিভূত

লন্ডন থেকে শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ::

সবাই এসে গেছে। বাকি শুধু শামীম খান এবং তার পরিবার। আমাদের স্বঘোষিত দলনেতা আদনান আশ্বস্ত করলেন। শামীম ভাই এক্ষুনি এসে যাবেন। চিন্তার কিছু নেই। শেষ মুহূর্তে তারা আমাদের ভ্রমণ সঙ্গী হওয়াতে একটু ঝামেলা হয়ে গেছে।

দেশের প্রেক্ষাপটে নেতাদের কথা বিশ্বাস করতে নেই। তবুও আমরা আদনানের কথা বিশ্বাস করলাম।

ইউনুস হাসান লিমন, সুমাইয়া বেগম, আদনান ও জাহরার অনুপমা সকালের নাস্তার স্পন্সর। এদিকে এ্যডভোকেট ইফফাত আরাও দেখি হালাল কে এফ সির নানান খাবার নিয়ে হাজির। বলা হল ভ্রমন সঙ্গী বাচ্চাদের জন্য তাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। কিন্তু থলের বিড়াল বাইরে বেরিয়ে আসতেই বুঝতে পারলাম শুধু বাচ্চারা কেন তাদের বাবা মা সহ ভ্রমন সঙ্গী সবাই রাক্ষসের মত সারা রাস্তা ধরে খেলেও খাবার শেষ হবে না।

মিস কাজী সাদেকুন্নাহার কনক। আমার পরম স্নেহের ভাতিজি। অতিশয় আদবকায়দা প্রবন একটা মেয়ে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে সাগর পাড়ের লন্ডনে। বৃটেনে উচ্চ শিক্ষা শেষে এখন সে সেন্সবারীর মতো একটা বিশাল কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। প্রবাশে নিজের আভিজাত্যতা ধরে রেখে কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও সততার সমন্নয় করে একটা বাংলাদেশী মেয়েও যে সফলতার চুড়াবিহীন উচ্চতায় আরোহণ করতে পারে, কনক তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া হতাশাগ্রস্থ মানুষের পথের দিশারি সে।

ব্রাইটনে ভ্রমন সঙ্গী হিসাবে কনকের আমাদের সাথে যাবার কথা ছিল। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। ভ্রমণকালে তাকে মনে পড়ছিল বেশ। তাই মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েছিলাম।

… কাজের চাপ কি খুব? মিস ইউ মামনী……

ব্রাইটন ট্রেন ষ্টেশন থেকে সমুদ্র সৈকত বেশি দূরে নয়। ওয়াকিং ডিসটেন্স ৮/১০ মিনিট। আমাদের দলনেতার পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো, হেটে সৈকতে যেতে হবে। আমরাও মধ্যপ্রাচ্যের মেষ পালের মত দলবেধে হেটে চললাম।

ইংলিশ চ্যানেলের কোল ঘেষা ব্রাইটন শহর দারুণ সুসজ্জিত। উচু নিচু রাস্তা আর ছোট ছোট টিলা দিয়ে ঘেরা শহরটি সত্যিই আকর্ষনীয়। সমুদ্র সৈকতের সাথেই কখনো মাথা উঁচু করে , আবার কখনো তালগাছের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃটিশ এয়ারওয়ে আই ৩৬০। যা ব্রাইটন আই ৩৬০ নামেও পরিচিত। এটা এখন ব্রাইটনের সর্বাধিক আকর্ষনীয় পর্যটন প্রডাক্ট।

আমাদের সবজান্তা দলনেতা আদনান আহম্মেদ আই ৩৬০ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বয়ান শুরু করলেন। দীর্ঘ দু বছরের বেশি সময় ধরে নির্মান শেষে আই ৩৬০ টাওয়ার টি উদ্বোধন করা হয়েছে ৪ আগষ্ট ২০১৬। নির্মান কাজে ব্যয় হয়েছে ৪৬.২ মিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড।মার্ক্স বারফিল্ড এই টাওয়ারের প্রধান প্রকৌশলী। বিশ্বনন্দিত লন্ডন আই এরও প্রকৌশলী ও মূল ডিজাইনার তিনি। আই ৩৬০ পৃথিবীর প্রথম সবচাইতে চওড়া সর্বোচ্চ মুভিং অবসজারভেশন টাওয়ার। কর্তৃপক্ষ মনে করছে ২০১৭ সালে গ্রিনিজ বুক রেকর্ড এ যায়গা করে নেবে বিশ্বখ্যাত সর্বোচ্চ সিলিন্ডারেষ্ট আই ৩৬০ টাওয়ার।

সিদ্ধান্ত হলো আমরা প্রথমে টাওয়ারে উঠব। তারপর যাবো সমুদ্র সৈকতে। আমার ছেলে ইতোমধ্যে বেকে বসল। সে টাওয়ারে উঠবে না। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ, বিশাল জলরাশি ইশান কে যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। জনপ্রতি ১৫ পাঊন্ড মূল্যের টিকেট নিয়ে এলো আদনান।

বৃটেনে সাধারনত বিমান, ট্রেন, বাস ইত্যাদির টিকেট সহ ভ্রমন বিলাসি এ সব টিকেট ওয়ান লাইনে আগে থেকে কিনলে বেশ খানিকটা সাশ্রয় হয়। আই ৩৬০ টাওয়ারে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই বলে জানালেন দলনেতা। লিমন একটু বিজ্ঞের হাসি দিয়ে আদনান কে বললো “তুই বেটা কিছুই জানিসনে তাই বল”

কঠোর নিরাপত্তা তোরন পেরিয়ে আমরা সম্পূর্ণ কাচের তৈরী টাওয়ারের দর্শক চেম্বারের অপেক্ষা করছি। সেখানে নিরাপত্তা এতই জোরালো যে পকেটে লাইটার নিয়েও কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

শাহীন ভাই সুইডেন থেকে বেড়াতে এসেছেন লন্ডনে। স্বপরিবারে তিনিও আমাদের ভ্রমন সঙ্গী। শাহীন ভাইকে খানিকটা উদ্বিগ্ন মনে হলো।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কোন সমস্যা?

দেখুন না ছবি তোলার সময় আসতেই ক্যামেরাটা বেকে বসল।

ব্যাটারী চার্জ আছে তো?

হ্যা নতুন ব্যাটারী।

আমি কি ক্যামেরাটা একটু দেখতে পারি?

অমনি সেটা আমার হাতে তুলে দিল শাহীন ভাই। সামান্য কারুকাজ করতেই দেখি ক্যামেরা ঠিক হয়ে গেছে। সাথে সাথে খুশিতে ঝলমল করে উঠল আকর্ষনীয় চেহারার অধিকারী শাহীন ভাই।

 

এদিকে শিবলী সাদিক রোমেল, জুবায়ের, লিমন, রাসেল, মাহমুদুল হাসান সহ সবাই ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। আমার মেয়ে মাইশা সুইডেন থেকে আসা শাহীন ভাই এর মেয়ে রাইসা কে নিয়ে মেতে উঠেছে। দেখে মনে হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে রাইসাকে মনে ধরেছে মাইশার।

আই ৩৬০ টাওয়ারের দর্শক চেম্বারটির রয়েছে তিনটি স্টপেজ। প্রথম স্টপেজ মাটির নিচে। এটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন। পর্যটকদের আউট গোয়িং এলাকা। দ্বিতীয় স্টপেজ টিকেট কাউন্টার ও মূল প্রবেশ দ্বারের সাথে। তৃতীয়টি সমতল ভূমি থেকে ও সিলিন্ডার আকৃতির টাওয়ারের অনুমানিক ১৩৮ মিটার উপরে।

 

২০০ মানুষ বহনযোগ্য দর্শক চেম্বারটি মাটির নীচ থেকে উপরে উঠে এলো। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। সতর্ক সংকেত বেজে উঠল। বন্ধ হয়ে গেল দরজা। দর্শক ভর্তি চেম্বারটি উপরে ঊঠতে থাকলো।

আকাশ ভরা সোনালী রোদ। টাওয়ারের এক পাশে বিরাট বিশাল ইংলিশ চ্যানেল। অন্যপাশে নন্দন প্রাধান্য ব্রাইটন শহর। মাঝখান থেকে প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় রাস্তা। আমরা লিফটের মতো উপরের দিকে উঠছি তো উঠছি। সবার চোখে মুখে একবাশ আনন্দ আর উচ্ছাসের ঘনঘটা।। প্রকৃতির সাথে সবাই মিলে মিশে একাকার। হঠাৎ চেম্বারটি থেমে গেল। আর উপরে যাবে না সে। গোল আকৃতির এই দর্শক চেম্বারটি মনে হচ্ছে মেঘের মাঝে হারিয়ে গেছে। এর এক এক দিক থেকে প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরেছে ভিন্ন ভিন্ন উপমায়। বহু বর্ণে চিত্রিত এই প্রকৃতি। রাস্তা, ঘাট, মহাসমুদ্র, আর পাহাড়ে ঘেরা ব্রাইটন শহর চোখের সামনে  উজ্জ্বল বৈশিষ্টে ফুটে উঠল।

সেলফি, গ্রুপ ছবি ইত্যাদি নিয়ে সবাই মেতে উঠেছে। আমরাও নামতে শুরু করেছি নিচের দিকে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দর্শক চেম্বারের ভেতরে রয়েছে হুইল চেয়ার এক্সেস, সিটিং বেনস, বার ও হালকা খাবারের রেস্তরা। সর্বত্রই শুধু অবাক হবার পালা।

আই ৩৬০ থেকে বেরিয়েছি। সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সবার মন বিষন্নতার নাগর দোলায় দোল দিল। সমুদ্র সৈকত মানে নির্ঝুম প্রকৃতি। যা নিয়ে যাবে কাব্যময় ভূবনে। কিন্তু ব্রাইটন সমুদ্র সৈকতে তার কিছুই নেই। পর্যটকদের কাছে টানার কোন উপকরনই চোখে পড়ল না। আমাদের বাম পাশে একটু দূরে অনেক পর্যটক রোদ্র স্নান অবস্থায় চোখে পড়ল। আদনানকে বললাম বাপজান ওদিকে গেলে কেমন হয়? উত্তরে বিনয়ের সাথে সে জানাল, ওখানে ফ্যামিলি নিয়ে যাবার কোন পরিবেশ নেই।

গত বছর সামারে বর্নমাউথ সমুদ্র সৈকতে গিয়ে আমার মাইশা, ঈশান উপভোগ করেছিলাম বেশ। এবার হলো ঠিক তার উলটো। ব্রাইটনে আসার মূল পরিকল্পনাকারি আদনানের উপর তারা ভিষণ বিরক্ত।

রাস্তা থেকে সমুদ্র পর্যন্ত নুড়ি পাথর দিয়ে ঠাসা। বসার বা শোয়ার কোন উপযুক্ত যায়গা নেই। রাসেল ও লিমন পানিতে নেমে পড়েছে।

এদিকে ভ্রমন সঙ্গীদের অধিকাংশই চাদর বিছিয়ে পাথরের উপর বসে গল্প গুজবে ব্যস্ত। আমার মাইশা ও সুইডেন থেকে আসা রাইসা সমুদ্র কিনারায়। মাইশা সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূর অজানায়। সবাই নিরাশ নির্বাক এ কোথায় এলাম আমরা। আদনান সবাইকে সান্তনা দেবার ব্যার্থ চেষ্টা করছে। লিমন তার ছেলে ও রাসেল ইশানকে নিয়ে পানিতে।

দুপুরে আমাদের প্যাকেট লাঞ্চ আসবে স্থানীয় টুন টুন ক্যাফে থেকে। সবাই যেন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

মুঠো ফোন বেজে উঠল। না এটা খাবার আসার বার্তা নয়। আমার ইতালী জীবনের এক সময়ের সুখ দুঃখের সাথী খান রফিক এর ফোন। লন্ডন থেকে ব্রাইটন আসার পথে অনেকবার ফোনে খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। বিলেত জীবনের প্রথম থেকেই ব্রাইটনে বসবাস করেন রফিক ভাই। বিখ্যাত ইতালীয়ান সেফ হিসাবে তার রয়েছে ব্যপক পরিচিতি। এদেশের টেলিভিশনেও ইতালীয়ান ফুডের উপর কুকিং শো করে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন এই গুনী মানুষটি।

টুন টুন ক্যাফের স্বত্বাধিকারী শামীমা রহমান কল্পনা আমাদের লাঞ্চ নিয়ে এলেন। সাথে ছিল তার দুই কন্যা। আমরা সবাই ধরাধরি করে গাড়ী থেকে খাবার নামাতে সাহায্য করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে কল্পনা ভাবীর কল্পনার মানুষ ড. সাইদ আমাদের সাথে যুক্ত হলেন। ইতোমধ্যে ব্রাইটন থেকে আমাদের কাফেলায় সামিল হয়েছেন। শমসের আলী, রোমানা ভাবী ও তার পরিবার।

কল্পনা ভাবী ও সাইদ ভাই উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বি.আর.এ.সি এর উর্ধতম কর্মকর্তা সাইদ ভাই শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে বিলেতে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসেন প্রায় দশ বছর আগে। ব্রাইটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবছরই তিনি অর্জন করেছেন ফেলোশিপ।

সূর্যদেবী তার প্রখর আলোর দ্রুতি ছড়িয়ে পশ্চিমে কিছুটা হেলে পড়েছে। আমাদের লাঞ্চ ও শেষ।

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বলিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। পথে ম্যাকডোনালস এ বসে আইসক্রিম, চা, কফি খাচ্ছি। রাসেল আমার ক্যামেরা নিয়ে ঠুসঠাস ছবি তুলছে। এমন সময় সাদা হাস্যজ্জল রফিক ভাই এলেন। সাথে মঞ্জু ভাবী, প্রমা, আবরার ও ফারিহা। রফিক ভাইয়ের মেঝ মেয়ে সাবিহা আসেনি। তার শরীর ভাল নয়। ব্রাইটনে এসেও সাবিহার সাথে দেখা হবে না এ কথা বলতেই প্রমা  তৎপর হয়ে উঠল। অবশেষে বারবার টেলিফোন করে টুন টুন ক্যাফেতে সাবিহা কে আমার সামনে হাজির করেছিল-মালিহা মার্জান প্রমা।

বলিং খেলায় প্রমা বেশ পারদর্শী বুঝতে বাকি রইল না। সে বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে মেতে উঠেছে। এদিকে বড়রা বেঞ্চে বসে পা ছড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। প্রমা বার বার অনুরোধ করছে তাদের সাথে খেলায় অংশ নিতে। সম্ভাবত এখানে একটা চালাকি ছিল প্রমার। লক্ষ করলাম স্কোর বোর্ডে সে সবার চাইতে এগিয়ে। বলিং এর উপর প্রমার দক্ষতার কারিশমা দেখানোর জন্যই হয়ত তার এই কাকুতি।

টুন টুন ক্যাফেতে পৌছে দেখি গাড়ি নিয়ে রফিক  ভাই আগেই দলে বলে পৌছে গেছে। গল্প জুড়ে দিয়েছে কল্পনা ভাবীর সাথে। আমাদেরকে ভেতরে যেতে বললেন ভাবী। একটু চালাকি করে কিছুক্ষন বাইরে আটকে রাখলেন আদনান ও জাহরার কে।

ভেতরে গিয়ে আমি হতবাক। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। স্মৃতির বীণায় বেজে উঠল সেই পুরানো দিনের সুর। স্মৃতি হচ্ছে বন্ধন আর বিস্মৃতি হচ্ছে মুক্তি। যে মানুষের মধ্যে মানুষ বসবাস করে সে কি কোনদিনও মুক্তি চায়? না চায় না। চায় বন্ধন। প্রতিটি মানুষের বন্ধনের ধারা ও নৈতিকতা ভিন্ন। এটা প্রাণ প্রকৃতির সাথে জীবন সম্পর্কের মতোই অবিচ্ছেদ্য। কোন মানুষকে মানুষ হিসাবে বিকশিত হতে হলে প্রেম, ভাললাগা, ভালবাসা, বন্ধন ও সমর্পণের বিকল্প নেই।

 

আজ ২৫ আগষ্ট। আমার স্নেহের আদনান ও জাহরার সমর্পণের দিন। তিন বছর আগে এই দিনে ওরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। অতিশয় নম্র ভদ্র স্বজন হিসাবে সবার মাঝে পরিচিত আদনান তখন স্টুডেন্ট হিসাবে বসবাস করত সাগড় পাড়ের লন্ডনে। জাহরার ছিল প্রকৃতির স্বর্গ ইতালীর সর্ব উত্তর প্রদেশ বোলছানোতে। ওদের বিয়ের প্রধান কডিনেটর ছিলাম আমি।

লন্ডনের অভিজাত এলাকা বার্কিং সাইডের বিরাট বিশাল বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে বর সাজে সজ্জিত হয়ে হাজির হয়েছিল আদনান। বিবাহ অনুষ্ঠানে আমার সহকর্মী এক ঝাক গনমাধ্যম কর্মী সহ অনেক কমিউনিটি ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। লন্ডনের বাইরে থেকেও ছুটে এসেছিলেন আলমগীর ভাই, নীলু ভাবী, আদৃতা ও একরা। স্কাইপে সবার উপস্থিতিতে বিয়ে হলো ওদের। প্রযুক্তির এই স্বর্ণযুগ পৃথিবীকে যে কত ছোট করেছে তা তুলে ধরতে লন্ডনের বাংলা গণমাধ্যমে লেখা লেখি ও টিভি রিপোর্টিং হয়েছিল বেশ।

আদনান ও জাহরার টুনটুন ক্যাফের ভেতরে প্রবেশ করল। আমরা সবাই আতুশবাজি ফুটিয়ে অভিনন্দন জানালাম। সাইদ ভাই ও কল্পনা ভাবী এ অনুষ্ঠানের কথা বিবেচনায় এনে সেদিন রেস্তরা বন্ধ রেখেছিলেন। আমাদের জন্য আয়োজন করেছিলেন অনেক কিছুর।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমরা এখন লন্ডনের পথে। সবাই ক্লান্ত স্রান্ত। নিজ নিজ আসনে বসে ঝিমাচ্ছে সবাই। দূর থেকে ভেসে আসছে গানের সূর। হৃদয় ছোয়া গান।

হৃদয় চিরে যদি দেখানো যেতো, আমি যে তোমার তুমি মানতে। সে কথা তুমি যেন জানতে। কত যযে তোমারে বেসেছি ভাল…………………………

Published....Probash Mela Oct.2016....Weekly Desh....Nov 2016