।। শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ।।
পূর্ব প্রকাশের পর :প্রচণ্ড আস্থা, মনোবল, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা একজন মানুষকে শূন্য থেকে যে চূড়াবিহীন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মঈন উদ্দীন আহমেদ। তিনি লন্ডনের কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া লেখা শেষে ব্রিটেনে টিকতে না পেরে চলে যান পর্তুগালে। সেখানে আবার পড়ালেখা ও পর্তুগিজ ভাষা শিখেন। এর পর ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবন যুদ্ধে। মঈন এখন পর্তুগাল ইমিগ্রেশন হাই কমিশনের সহকারী অফিসার । পর্তুগাল সহ ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অহংকার। ভিন দেশ বা অজানা ভাষা বড় বিষয় না। যোগ্যতা ও চেষ্টা থাকলে মানুষ যেকোনো দেশেই অভিষ্ঠ লক্ষে পৌঁছাতে পারে এটাই তার প্রমান।
অফিস শেষে মঈন আমাকে নিয়ে গেল জিএস পর্তুগাল মাল্টিকালচারাল একাডেমিতে। সরকারি আর্থিক সহযোগিতায় এখানে অল্প সময়ের মধ্যে পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়। যা কাজ কাম ব্যবসা বাণিজ্য ও নাগরিকত্ত্ব পাবার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।বাংলাদেশী ছাড়াও বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা এখানে আসেন পর্তুগিজ ভাষা শিখতে।
জিএস পর্তুগাল মাল্টিকালচারাল একাডেমির সভাপতি সম্রাট ভাই সাধারণসম্পাদক রাসেল আহমেদ। উভয়ের সাথে কথা হলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এছাড়া পরিচিত হলাম বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী শফিউল আলমের সাথে । তিনি পর্তুগাল ছাড়াও আফ্রিকাতে বাংলাদেশী শুকনা খাবার আমদানি করেন। রুয়া দু বেনফোরমোসো । একটি রাস্তার নাম। এটা লিসবনের বাংলাদেশী পাড়া। আমাদের সাথে এখানে রাসেলও এসেছেন। চোখে পড়লো “স্পাইসি হার্ট” নামের একটি বাংলাদেশী রেস্তোরায় স্বপরিবারে ডিনার করছেন রানা তাসলিম উদ্দিন।
রুয়া দু বেনফোরমোসো রাস্তাটা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০০ মিটার। এখানে অবস্থিত ৪৪ ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাসা বাড়ি হোটেল মোটেলের মালিক বাংলাদেশীরা । অনেক বছর আগে এলাকাটি ছিল ব্রাজিলিয়ানদের দখলে। ৪০/৪৫ বছর আগে এটি হাত বদল হয়ে আসে মোজাম্বিক ইন্ডিয়ানদের হাতে। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশিরা পর্তুগালে আসা শুরু করলেও ঐ সময় তারা এই ঐতিহাসিক রাস্তাটিতে ঢুকতেও পারতো না। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে এলাকাটি কবজা করেছে পর্তুগালে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সবার কাছে এটা আজ “বাংলা জোন” হিসাবে পরিচিত।এখানে আগত ভোক্তাদের অর্ধেকেরও বেশি পর্তুগিজ ও বিভিন্ন দেশের টুরিস্ট।
রানা ভাই ইতিমধ্যে ডিনার শেষ করে রেস্তরার বাইরে এসেছেন। আমার সাথে কথা বলার জন্য।২০১২ সালে তার সাথে আমার প্রথম দেখা গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের প্রেসিডেন্ট হোটেলে।পাশের রুমে ছিলেন তিনি। অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা’র ) কনভেনশনে যোগ দিতে তিনি গিয়েছিলেন লিসবন থেকে আমি লন্ডন থেকে।
পর্তুগালের মুল ধারার রাজনিতীতে সক্রিয় রানা ভাই ।সেদেশের সিটি কর্পোরেশনর দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশীদের প্রতিনিধি হয়ে ক্ষমতাসীন লিসবন সোস্যালিস্ট পার্টি থেকে লিসবন সান্তা মারিয়া মাইওরের কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি তিনি ।
আলোচনার এক পর্যাপ্ত পর্তুগালের বহুল আলোচিত গোল্ডেন ভিসা ,স্টুডেন্ট ভিসা, স্টুডেন্টদের বাড়তি সুযোগ সুবিধা, ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনা এবং দেশটির মানবিক অভিভাসন নীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যামেরার সামনে কথা বললেন রানা ভাই।ক্যামেরায় ছিলেন সাংবাদিক রাসেল আহমেদ ।
রাত অনেক হলো। এবার হোটেলে যাবার পালা। ফারিয়া ও শুভ আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক সাথে ডিনার করবে বলে। এদিকে আমি তো "স্পাইসি হার্ট" এর মালিক সুমন ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে ডিনার করে ফেলেছি। ফারিয়ার বকাঝকা শুনতে হবে বুজতে বাকি রইলো না।
পরের দিন আমাদের গন্তব্য কাছকাই।লিসবন থেকে বেশ দূরে। ফারিয়া, শুভ ও আমি ট্রেনে চেপে বসলাম।পাহাড়ে ঘেরা লিসবন শহরে কখনো উঁকি মারছে সকালের সোনালী সূর্যের আলো। কখনো বা শুভ্র মেঘে ঢাকা পড়ছে নীল আকাশ। দারুন উপভোগ্য দৃশ্য।
ফারিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকোনোমিক্সে মাস্টার্স করা একটি মেধাবী বালিকা । ব্রিটেনে এসে প্রথম প্রথম সে জীবিকার তাগিদে সবধরণের কাজ করলেও তার দুচোখ ছিল স্বপ্নের কাজলে ঢাকা । কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের জন্য সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করেছে।ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করে নিজেকে তৈরী করেছে। ফসল হিসাবে আজ সে ব্রিটেনের সার্টিফায়েড একাউন্টেন্ট।
বয়স বড় বাধা নয়। চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকলে ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে অভিষ্ঠ লক্ষে পৌঁছানো শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।একথা ফারিয়ার মতো অনেকে প্রমান করেছে। শুভ ও ফারিয়া আমাকে আঙ্কেল বলে ডাকে। বড্ডো সম্মান করে আমাকে। ফারিয়ার মা যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপাল ।যশোরে সবার পরিচিত ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন অসাধারণ ভাল মানুষ তিনি।
আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। কাছকাই আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত পর্তুগালের একটি উপকূলবর্তী শহর। এদেশের অন্যতম ধনী পৌরসভা। কাছকাই শহরে মানব বসতির শুরু হয় সেই পুরাতন প্রস্তরযুগের শেষ ভাগে। যদিও বর্তমানের এটি একদম চকচকে নতুন।আধুনিকতায় ভরপুর। আর এর পেছনে কারণ ধনী পর্যটকেরা বা লিসবনের ধনী সম্প্রদায় ছুটি কাটাবার জন্যে ছুটে আসে এখানে । একে ধনীদের পছন্দের গন্তব্য, তার উপর উপকূলবর্তী শহর ফলে মজা, মিঠা দুটিই আছে এখানে ।আমরা হাটতে হাটতে চলে গেলাম একদম নিচে যেখানে সাগরের পানি এসে ক্লিফে আছড়ে পড়ছে।এতো কাছ থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক আগে দেখিনি । এর আয়তন ১০৬.৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার (৪১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল), এটি পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থিত। উত্তরে উত্তর মহাসাগর এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর।
শুভ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে সমুদ্র স্নান করার। সে ড্রেস চেঞ্জ করে মহা আনন্দে চলে গেল সাগর পানে। ফারিয়ার মতিগতি বুজতে পারছিনা। শুভর গ্রীন সিগন্যাল পেলে সে কি করে বুঝা যাবে। আমরা দুজন উপভোগ করতে লাগলাম প্রকৃতির লীলা। কিছু ওয়াটার ল্যান্ডস্কেপ ছবি নিলাম। ভিডিও করলাম সাথে সাথে। মনে পড়ে গেল এই সেই আটলান্টিক মহাসাগর যার মাঝখানে পাওয়া যায় কিছু ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি।তাছাড়া এখানে একটি বিশেষ ত্রিভুজাকার অঞ্চল আছে। নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। আটলান্টিক মহাসাগরের ঐ এলাকাটিতে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে ।যার হদিস পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে আজো গবেষণা চলছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর একটি। অনেকের মতে সারা বিশ্বজুড়ে সবচাইতে আলোচিত রহস্যময় অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এর রহস্য উৎঘাটনের জন্য অসংখ্য গবেষণা হয়েছে। এই স্থানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধমে প্রচুর পরিমানে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তৈরী করেছে ডকুমেন্টারী। তবু আজও বিজ্ঞানের এই স্বর্ণ যুগেও স্থানটির রহস্যময়তার পেছনের গল্প অজানা রয়ে গেছে।
আমাদের শুভ সাহেবের মুখখানা মলিন। সমুদ্র স্নান না করেই ফিরে এলো সে।খুব মলীন কণ্ঠে বললো পানি খুব ঠান্ডা ফারিয়া। ওদিকে ভুলেও যেওনা। পানিতে নেমে আমি বেকুব হয়েছি। এ পর্যন্ত যত জায়গাতে গেলাম সব জায়গাতেই স্যুভেনির ব্যাবসায় বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা চোখে পড়লো। খবর নিয়ে জানা গেলো পর্তুগালে এই সেক্টরটি বাংলাদেশিরা প্রায় একক ভাবে ডমিনেট করে । ট্রেন থেকে নেমে এমন কিছু সুবেণুর দোকানে গিয়েছিলাম আমরা। ফারিয়াকে বললাম ফেরার পথে ওদের ২/১ জনের ইন্টারভিউ নিলে কেমন হয়। সে সম্মতি দিলো। আমিও তাই করলাম। শুভ আমাকে ক্যামেরায় সাহায্য করলো।
কাছকাই থেকে ফিরে মঈন সহ কয়েকজন বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের ইন্টারভিউ নেবার কথা। যথারীতি মঈন আমাকে ছবির মতো সুন্দর প্রাকৃতিক ও নান্দনিক সৌন্দর্যের শান্ত স্নিগ্ধ সবুজে ঘেরা মনোরম একটা পার্কে নিয়ে গেল। পার্কের একপাশে ক্রমে ঢালু হওয়া অসংখ্য টালির ছাদ। এছাড়া বোনাস হিসাবে সেখানে ছিল পাখিদের কিচির মিচির ।
বাংলাদেশর অধিকাংশ স্টুডেন্ট উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপের মধ্যে ব্রিটেনকে একমাত্র নির্ভরযোগ্য দেশ মনে করেন।এটা অযৌক্তিক কিছু নয়। কারণ যুগ যুগ ধরে ব্রিটেন তৃতীয় বিশ্বে এ ধারণার প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। ৩০ বছর আগে ইতালিতে দেখছি বিদেশীদের জন্য তখন একমাত্র বিশ্ববিদ্দালয় ছিল পেরুজা বিশ্ববিদ্দালয় । অথচ আজ ইতালীতে শতাধিক বিশ্ববিদ্দালয়ে বিদেশীরা লেখা পড়া করে।
ব্রিটেনের বার্ষিক আয়ের একটা বিরাট অংশ আসে এই স্টুডেন্ট বাণিজ্য থেকে। ইউরোপের অন্নান্য দেশগুলো এটা বুজতে পেরে এই বিশাল স্টুডেন্ট বাণিজ্যের ভাগ নিতে তারাও নানা কৌশোক অবলম্বন করতে শুরু করেছে।উল্লেখযোগ্য কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে। একটু যোগ্যতা থাকলে সহজ শর্তে ভিসা প্রদান। বিনা মূল্যে অথবা নামে মাত্র টিউশন ফি দিয়ে পড়ার সুযোগ। আর্থিক অসুবিধা গ্রস্থ স্টুডেন্টদের জন্য প্রফেসরদের আন্ডারে রিচার্চ প্রজেক্টে কাজ। বিনামূল্যে থাকা ,খাওয়া অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ফান্ড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফান্ড রিজিওনাল স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করে দেয়া ইত্যাদি। ব্রিটেনের বাইরে ইউরোপের অন্নান্ন দেশের বিশ্ববিদ্দালয়গুলোর রেঙ্কিং মোটেও কম নয়। ক্ষেত্র বিশেষে ব্রিটেনের চাইতে অনেকে এগিয়ে। স্টুডেন্ট বাণিজ্যের এই ভাগাভাগির প্রতিযোগিতায় পর্তুগাল মোটেও পিছিয়ে নেই। বরং স্টুডেন্ট নন স্টুডেন্ট সবার জন্য অল্প সময় পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাবার যে সুযোগ আছে ইউরোপের আর কোথাও তা নেই।
ভ্রমণের শেষ দিনে আমরা গেলাম ভাস্কো দা গামা শপিং সেন্টার। ১৯৯৮ সালে এটা নির্মাণ করা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড এক্সজিবিশনের জন্য। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে এটাকে রূপান্তরিত করা হয় শপিং সেন্টারে। আধুনিক স্থাপত্য দৃষ্টিনন্দন শপিং সেন্টারের উপরিভাগ জাহাজের আদলে তৈরী। দূর থেকে দেখলে এটাকে একটা জাহাজ মনে হবে। অনেক বড়ো শপিং সেন্টার এটি । কি নেই সেখানে। কিন্তু অন্যান্য মহিলাদের মতো কেনা কাটার জন্য ফারিয়াকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেলো না।
শপিং সেন্টারের এক দিকে বিশাল খোলা চত্বর। রাস্তার দুধারে পতাকা উড়ছে পত পত করে। এর একটু দূরেই লিসবন ওশেনারিয়াম। এটা হলো ইউরোপের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকোরিয়াম। ১৯৯৮ সালের লিসবন এক্সপোতে এটির উদ্বোধন হয়েছিল। রহস্যময় নানা সামুদ্রিক প্রাণীর এক কৃত্রিম অভয়ারণ্য, বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও অ্যান্টার্টিক মহাসাগরের জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই অ্যাকোরিয়াম। পাশে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ সেতু ভাস্কো দ্য গামা ব্রিজ। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং মনোরম কেবল কার।সারাদিন কাটানোর জন্য একটা সুন্দর স্থান। আমরা অনেক্ষন ছিলাম সেখানে। ফটো সেশন খাওয়া দাওয়া সব হলো । কিন্তু কিছুই কেনা কাটা হলো না।
ইউরোপের কোথাও একজন অভিবাসীর যখন পা রাখার জায়গা থাকে না তখন সে বৈধ উপায়ে থাকার ও নাগরিকত্ব পাবার জন্য পর্তুগাল কে বেছে নিতে দেখা যায় । কাজ, ব্যবসা ও স্থায়ীভাবে বসবাস করার দারুন সম্ভাবনার একটি দেশ পর্তুগাল।এদেশে অবস্থানরত অধিকাংশ বাংলাদেশী পেশা হিসাবে ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। অল্প বিনিয়োগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখানে মোটেও দুরূহ ব্যাপার নয় । আইন কানুনও বেশ সহজ। তাছাড়া স্টুডেন ভিসা ,ভ্রমণ ভিসা বা যেকোনো ভিসা নিয়ে এদেশে এসে এমনকি অবৈধ অভিবাসীদের জন্যও নাগরিকত্ব লাভের যে সুবর্ণ সুযোগ এখানে আছে, ইউরোপের কোথাও তা নেই। সেজন্য ইদানিং কিছু কিছু বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ভিড় জমাচ্ছে গৌরবান্বিত অতীত ইতিহাসের ধারক, এক সময়কার অর্ধেকের বেশি পৃথিবী শাসন করা দেশ পর্তুগালে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্টুডেন্ট বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় প্রফেসরের রেফারেন্স লেটারের বদৌলতে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচ প্রোগ্রামে লিসবনে পড়ালেখা করেন । তিনি বললেন মাস্টার্স লেভেলে পর্তুগালে পড়ালেখার সুযোগ বিস্তর। টিউশন ফি বাৎসরিক ১২০০ থেকে ৩০০০ ইউরো মাত্র ।স্টুডেন্টদের কাজের অনুমতি থাকে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা। কেউ এর বেশি করলে তাতে কোনো সমস্যা হয় না।একটু ভালো ইংলিশ জানলে আইএলটিএস এর কোনো প্রয়জন পড়ে না। তিনি আরো বললেন পর্তুগালের অধিকাংশ বিশবিদ্যালয়ের রেঙ্কিং বিশ্বমানের। সব চাইতে মজার ব্যাপার হলো ইচ্ছা থাকলে একজন স্টুডেন্ট প্রথম দিন থেকেই এদেশে নাগরিকত্ব পাবার পথে অগ্রসর হতে পারে । যা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে সম্ভম না। দালালের খপ্পরে না পড়ে নিজেই বিশবিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে পর্তুগালে আসার আহ্বানও জানান তিনি ।
আমাদের দেশের তরুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেকে বিদেশ হতে একটা ডিগ্রী নেবার স্বপ্ন দেশে ।স্থায়ী ভাবে থাকার সুযোগ খোঁজে স্বপ্নের ইউরোপে ।অনেকেরই সেই সামর্থ আছে কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে তা বাস্তবায়নকারীর সংখ্যাটা খুব বেশি দেখা যায় না।
ভারত,চায়না ,শ্রীলংকা,পাকিস্তান ও অন্নান্ন দেশের দূতাবাস এসব দেশের সরকারের সাথে শিক্ষা বিষয়ে যোগাযোগ রাখে । নিয়মিত লিয়াজু রক্ষা করে শিক্ষাবৃত্তিসহ স্টুডেন্টদের নানান সুযোগ সৃষ্টির জন্য । এর পর সরকারিভাবে এবং গণমাধমের সাহায্যে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেয় দেশের প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । এদিকথেকে প্রবাসে আমাদের দূতাবাসগুলো অনেক পিছিয়ে।সরকার এদিকে একটু নজর দিলে উপকৃত হতে পারে আমাদের নতুন মেধাবী প্রজন্ম।বাড়তে পারে ঝাঁকে ঝাঁকে রেমিটেন্স যোদ্ধা।
আজ আমাদের লন্ডন ফেরার পালা। মঈন আমাদেরকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্ট এসেছে। আমাদের বহনকারী প্লেন উপরে উঠতেই ভিউ কার্ডের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠলো আটলান্টিক মহাসাগর ও টাগুস নদীর র্তীরে অবস্থিত ৭টি বড় বড় পাহাড়ে ঘেরা মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত আধুনিক শহর লিসবন ।প্লেনের জানালা দিয়ে দেখছি আটলান্টিক মহাসাগর। মনে মনে ভাবছি, এই বিশাল জলরাশীর মধ্যে লুকিয়ে আছে কতোই না রহস্য, জানা অজানা সব কাহিনী । (শেষ )
লেখক : Editor : Newslife24.com, কলামিস্ট।
London : December 2019