আয়েবা সম্মেলনের সফল সমাপ্তি
শেখ মহিতুর রহমান বাবলু :: প্রতি দিনের মতো আজও ঘুম ভাংলো সকালেই । সারারাত বিরামহীনভাবে ঘুমিয়ে শরীর্রে সব অবসাদ দূর হয়ে গেছে। চোখ মুখ থেকে কেটে গেছে আগের দিনের ক্লান্তির ছাপ। শরীরটা বেশ ঝর ঝরে মনে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হোটেলে সিংগেল রুম সংকট দেখা দিলে আমরা কেউ কেউ ডাবল রুম নেই। আমার রুম মেট হলেন আশরাফ উদ্দীন। বৃটেনের বাংলাদেশী কম্যুনিটির প্রভাবশালী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের একজন তিনি। বিশ্বনন্দিত বৃটেনের কারী ব্যবসা সম্প্রসারনে বিগত ৪০ বছর ধরে আশরাফ ভাইয়ের রয়েছে অকল্পনীয় অবদান। বর্তমানে এই প্রবীন সমাজসেবক বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সহ সভাপতি এবং ক্যাটারিং এ্যাসোসিয়েশন ইউকের সাধারণ সম্পাদক। আয়েবা কনভেনশনে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে যে ১৬ জনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় আশরাফ ভাই তাদেরই একজন।
আশরাফ ভাই ভিষন আদব কায়দা প্রবন । কথা বলেন আন্তরিকতার সাথে। শুদ্ধ বাংলা ভাষার উপর তার দখল কম। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা ও ইংরেজীতে কথা বলেন বেশী। প্রথমে মনে হয়েছিল আশরাফ ভাই বয়জ্যৈষ্ঠ । বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার সাথে একই হোটেল রুমে থাকা বোধ হয় আরামদায়ক হবে না। অবশেষে আমার ধারণা ভুল প্রমান হলো। বয়জ্যৈষ্ঠ হলেও আশরাফ ভাই ভিষণ ফ্রেন্ডলি ও সাদা মনের মানুষ হিসাবে প্রথম দিনই আমার সাথে মিশে গেলেন। রাতে সাধারণত তিনি একটানা ঘুমান না। কখনো নামাজ পড়েন কখনো টিভি দেখেন, চা খান। বসে থাকেন। সেবন করেন ঔষধ। এভাবেই কেটে যায় তার রাত। কি এক মহা চিন্তার মানুষ আশরাফ ভাই। বিজ্ঞের মতো শুধু ভাবনার জগতে ডুবে থাকেন। একদিন আমাকে খুব আবেগ ভরা কন্ঠে বললেন। বিগত চল্লিশ বছর থাকি আমি কম্যুনিটির সেবা কইরা আইরাম। কিন্তু এই পর্যন্ত কেউ আমার কাজের স্বীকৃতি দি”ে না। এই পয়লা আয়েবা আমারে পুরস্কার দিবার সিদ্ধান্ত নিছে। আমি আয়েবার কাছে কৃতজ্ঞ।
আজ সকালে দুজনে নাস্তা শেষে এক সাথে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ সমিতির ১ম কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল চারটি সেমিনার, ১৬ জন গুনি মানুষের মাঝে সম্মাননা পুরস্কার বিতরন এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দেড় শতাধিক ডেলিগেট সহ আট শতাধিক বাংলাদেশী কমি্যুনিটি প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ইতিমধ্যে সেমিনার কক্ষে প্রবেশ করেছে।
দেশে বিদেশে প্রবাসীদের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনা । বাংলাদেশে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরনের উপায়, এন.আর. বি দ্বারা দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের সব সরকারের সমর্থন আদায় শীর্ষক আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ১ম সেমিনারে।
দ্বিতীয় সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ইউরোপে বাংলাদেশী ষ্টুডেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি,তাদের সমস্যা ও সমাধান। বাংলাদেশের ইমেজ প্রবাসে বৃদ্ধির উপায়, বাংলাদেশের ব্রান্ডিং ইত্যাদি।
দুপুরের খাবারে বিরতির আগেই ১ম ও দ্বিতীয় সেমিনার শেষ হলো। তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিনার লান্স বিরতির পর।
বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যে সংস্কৃতির বিনিময় এবং বিশ্বময় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ইমেজ বৃদ্ধির উপায় সংক্রান্ত আলোচনা হয় তৃতীয় সেমিনারে।
আয়েবার দ্বিতীয় দিনের ৪র্থ সেমিনারটি ছিল সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ । এতে প্রচুর পরিমানে ডেলিগেটরা অংশ নিয়ে তাদের সমস্যা ও অভিজ্ঞতার কতা ব্যক্ত করেন। চতুর্থ সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা ও সমাধান।
বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করে কেবলমাত্র প্রবাসীদের অর্থ ও (৯৯%) মালিকানায দেশে এন আর বি ব্যাংক খোলার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দাবি ও সুপারিশ করা হয় ৪র্থ সেমিনারে।
এথেন্সে সর্ব ইউরোপীয় বাংলাদেশ সমিতির ১ম কনভেনশনের শেষ দিনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নে প্রবাসীদের অর্থ, প্রবাসীদের উদ্যোগ এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য কনভেনশনে গৃহিত প্রস্তাব সমূহ কার্যকর করতে সরকারের প্রতি জোর আবেদন জানান । সমাপনি অনুষ্ঠানে আয়েবার সাংগাঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ড. জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্রীসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রুদূত জনাব আজিজুল হক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আয়েবা সাংগঠনিক কমিটির প্যাট্রন ও বাংলাদেশ ফ্রান্স চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু, যুক্ত রাজ্যের বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল এস এর চেয়ারম্যান আহম্মেদ উস সামাদ চৌধুরী জে,পি , আয়েবা সাংগঠনিক কমিটির সদস্য প্রভাবশালী মিডিয়া
ব্যত্বিও লন্ডন মিডিয়া এন্ড টেকনোলজি কলেজের সি,ই,ও শামসুল আলম লিটন ও উদিচি যুক্তরাজ্যেও সভাপতি গোলাম মোস্তফা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান শেষে ড. জয়নাল আবেদিনকে সভাপতি ও কাজী এনায়েত উল্লাহ ই্নুকে সাধারন সম্পাদক করে আয়েবার পূর্ণাঙ্গ কার্যকরি পরিষদ ঘোষনা করা হয়।
লেখক, সাংবাদিক