তাহমিনা ইয়াসমিন শশী, ভেনিস, ইতালী :
ইতালিয় সরকারের ছোট একটা শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে সংবাদিকতায় পড়াশুনা শুরু করেছি খুব বেশি দিন হয়নি। প্রতিদিনই ক্লাসে নিত্য-নতুন বিষয় পড়ানো হয়। সংবাদ লেখা, সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে নিবন্ধ, প্রবন্ধ, ফিচার সব বিষয়ই যত্ন করে শেখানো হয়। প্রথম দিকে বুঝে উঠতে না পারলেও এখন ঠিক বুঝতে পারছি সাংবাদিকতার এই কোর্সটা মূলত আমার মতো আনাড়িদের জন্য না। যাইহোক আমি হাল ছাড়ার বান্দা না। লেগে আছি, লেগে থাকছি। আর একটা বিষয় হলো আমাদের এই কোর্সে প্রবাসী শিক্ষার্থী হিসাবে একমাত্র আমিই আছি। সেদিক থেকে শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং সহপাঠিদের কাছ থেকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি আমি তাদের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতার সম্মান রাখতে পারবো। ক’দিন আগে আমাদের এক শিক্ষক বললেন, একজন অনুকরনীয়, অনুস্মরণীয় বা অহংকার করার মতো মানুষকে নিয়ে ফিচার লিখতে হবে। শর্ত হলো যাকে নিয়ে লেখা হবে সে ‘গত’ হলে চলবে না, অবশ্যই ‘বর্তমান’ হতে হবে। মহাবিপদে পড়ে গেলাম, কি লিখবো? কাকে নিয়ে লিখবো? কোনো হাতা-মাথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। প্রফেসর বিষয়টি সহজ করে দেয়ার জন্য আমাকে বললেন, ইতালির প্রবাসী কম্যুনিটি থেকে এমন কাউকে নিয়ে লেখো যাকে নিয়ে তোমরা অহংকার করতে পারো। প্রফেসরের কথা শুনে মনে হলো তিনি আমাকে বিষয়টি সহজ করে দিবেন কী, আরো জটিল করে
দিলেন। প্রবাসী কম্যুনিটির কাকে নিয়ে লিখবো? প্রবাসে তো অনেক সফল মানুষ আছেন। আমি মনে করি প্রবাসের প্রতিটা মানুষই এক একজন সফল মানুষ। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সফল। নিজের চেষ্টায় প্রবাসী হয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে প্রতিমাসে যারা লাখ লাখ ইউরো, ডলার পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তারা সফল নয়তো কে সফল? কে আছে তাদের চেয়ে বেশি সফল মানুষ? কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। তার পরেও কথা থেকে যায়, সবাইকে নিয়ে তো আর পত্রিকার পাতায়, বইয়ের পাতায় লিখা যায় না, লিখা হয় না। যারা সৃষ্টিকর্তার দেয়া জ্ঞান বুদ্ধির শুদ্ধ চর্চা করে সমাজকে ব্যতিক্রম কিছু দিয়েছেন, দিতে পেরেছেন, দেয়ার চেষ্টা করছেন এমন মানুষকে নিয়েই পত্রিকায় লিখা হয়, লিখা উচিৎ।
ইতালিতে প্রবাসী একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে লিখার অদম্য প্রয়াস ছিল আমার অনেক দিনের। বিশেষ এই ব্যাক্তিত্বের সাথে আমার পরিচয় একটু ভিন্ন ভাবে। সাধারণ দশজনের সাথে যে ভাবে পরিচয় হয় ঠিক সে ভাবে না। বিশেষ মানুষদের সাথে বুঝি বিশেষ ভাবেই পরিচয় হয়। আমারও তাই হয়েছে। আমি তখন ড্রাইভিং স্কুলের ছাত্রী। সম্পূর্ণ ইতালীয়ান ভাষায় পড়াশোনা এবং পরীক্ষা দিতে হবে। ইতালিতে ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাশ করা আসলেই দূরহ একটা ব্যাপার। শুধু যে অভিবাসীদের জন্য তা না, শত শত ইতালিয়ানকেও দেখেছি ডাব্বা মারতে। প্রথমে থিওরিটিক্যাল পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তার পর প্রাকটিক্যল পরীক্ষা। একচুল এদিক ওদিক হওয়ার উপায় নেই। ইতালিতে গাড়ি চালাতে হলে এদেশের জটিল ট্রাফিক নিয়ম কানুন জেনে বুঝে পরীক্ষায় পাশ করে লাইসেন্স নিতে হবে। বাংলাদেশের মতো বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। থাকলেও ওপথে কেউ যেতো বলে মনে হয় না। কারণ এরা অনেক বেশি সচেতন। এরা বোঝে ড্রাইভিং পরীক্ষায় ফাঁকি দেয়া মানে নিজেকে ফাঁকি দেয়া। নিজের সাথে প্রতারণা করা। নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া। এমন ভুল ইতালিয়ানরা করে না, করতে পারে না। সে যাই হোক- সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা একটি বিদেশি ভাষায় পড়াশুনা করে ইতালিয় ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাশ করা সত্যিই কঠিন কাজ। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আরো বেশি কঠিন। কারণ আমাদের দেশের মানুষরা এতো এতো টাকা খরচ করে, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদেশে আসে যে টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতেই তাদের সময় পার হয়ে যায়। অন্যদিকে খেয়াল দেয়ার সময় হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই তারা ইতালিয় ভাষা আয়েত্ব করার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। ইতালিতে আমাদের প্রবাসী কমিউনিটির অবস্থাও অনেকটা এরকম। শুধুমাত্র ভাষার দিক থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কারণে তারা অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে থাকে।
ড্রাইভিং পরীক্ষায় ভর্তি হতে ভয় পায়। ভর্তি হলেও কৃতকার্য হতে পারে না। এতো জটিল আইন কানুন ইতালিয় ভাষায় পড়াশুনা করে পাশ করতে না পেরে গাড়ী চালানো তাদের কাছে স্বপ্নই থেকে যায়। শুরু হয় তাদের পিছিয়ে পড়া। কারণ ইউরোপে গাড়ী চালানো কোনো বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার কারণে ভালো বেতনের কাজ, শহরের বাইরে কমদামে ভালো বাসায় থাকার সুযোগ সুবিধাসহ অনেক কিছু হারাতে হয়। ইতালিয় ভাষায় আমার মোটামুটি ভালোই দখল আছে। আমি এখানে দোভাষী হিসেবে কাজ করি। সুতরাং বলাই যায় অনেকের চেয়ে ভালো ভাষা জানি। তারপরেও ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে দেখলাম অনেক কিছু বুঝতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। অনেক কিছুতে হিমশিম খাচ্ছি। তখনি আমার সাথে একটু অন্যরকম ভাবে পরিচয় হয় এই বিশেষ মানুষটির। যিনি আমার মতো লাখো প্রবাসী বাংলাদেশির অসুবিধাকে সুবিধা করে দিয়েছেন। এই সফল এবং বিশেষ মানুষটির সাথে আমার কখনো সামনা-সামনি পরিচয় হয়নি। তার সাথে আমার পরিচয় তার অসাধারণ কর্ম দিয়ে। অমূল্য সৃষ্টি দিয়ে। তার সেই সৃষ্টি সাফল্যের কথাই এখানে তুলে ধরছি। তার নাম শেখ মহিতুর রহমান বাবলু। ইতালিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স এবি বইয়ের লেখক। একাধারে তিনি সাংবাদিক, উপস্থাপক এবং ইতালিয়ান ফুড গবেষক। তার লেখা বই ইতালীয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স এবি ইতালী প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য রক্ষাকবজ হিসাবে কাজ করছে। প্রবাসীদের জীবন গতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তার অসাধারণ সৃষ্টি গৌরবে গোটা কমিউনিটি আজ গৌরব বোধ করে। আমরা মাথা উচু করে বলতে পারি, ইতালীতেও আমাদের ভাষায় বই আছে। ইতালীয় প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে বাংলা ভাষার অসাধারণ ড্রাইভিং বই। যে বইকে ইতালিয় সরকার স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এখন পর্যন্ত ইতালিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স এবি ইতালিতে একমাত্র বিদেশি ভাষায় বই যা ইতালিয় সরকার কর্তৃক অনুমোদন পেয়েছে।
শিল্পনগরী খুলনার সোনাডাঙ্গায় ১৯৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহন করেন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি এই ইতালীয়ান নাগরিক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সয়ম তিনি কাটিয়েছেন তার জন্মভূমি বাংলাদেশে। বাবা শেখ নাছরুর রহমান একজন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার। মা কাজী সালেহা রহমান গৃহিনী। লেখালেখির জগতে বাবলুর আগমন ছেলেবেলা থেকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিন পেরিয়ে তিনি যায়গা করে নেন দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে। এরপর নিয়মিত লিখেছেন বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকে। লেখা ও সাংবাদিকতার বাইরে তিনি একজন সফল সংগঠক, উপস্থাপক, সৌখিন ফটোগ্রাফার ও ইতালিয়ান ফুড গবেষক। তার একাধিক গবেষণাপত্র ইতালির বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে অনেক বার। ছাত্র জীবনে বাবলু একজন ভালো ফুটবলার ছিলেন। ভালো গান করতেন। খুলনার বেতারে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন। এছাড়াও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন দীর্ঘ সময়। ১৯৮৫ সালে তিনি ব্যবসায়িক কাজে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ডে। এরপর আর দেশে ফিরে যাননি। তিনি সুইজারল্যান্ডে দীর্ঘ ৫ বছর অবস্থান করেন। সেখান থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা ২০০০ সালে লেখালেখির জন্য তাকে একটি সম্মান সূচক এ্যওয়ার্ড প্রদান করে। ৯০ দশকে বাবলু সুইজারল্যান্ড ছেড়ে চলে আসেন প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইতািলতে। প্রথমে নোঙ্গর করেন রাজধানী রোমে। তার মন সেখানে টেকেনি। তিনি চলে যান ইতালির অন্যপ্রান্তে। আল্পস পর্বতের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি বোলজানো শহরে। তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের ইউরোপ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। রোম ও জুরিখ থেকে প্রকাশিত আরও দুটি পত্রিকায় তখন তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। প্রবাসের নানা বৈরীতার মোকাবিলা করে নিজেকে সাফল্যের চুড়ায় নিয়ে যেতে অনেক লড়াই করেছেন বাবলু। জটিল ব্যাকরণের ইতালিয়ান ভাষাকে খুব ভালোভাবে রপ্ত করেছেন। আদালতে, হাসপাতালে, পুলিশ ফাঁড়িতে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। বোলজানোর এক সময়ের জনপ্রিয় Radio Vox -এ তার হাত ধরেই বাংলা অনুষ্ঠান চালু হয়। তিনি ভেনিসের Radio Base বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন কিছু সময়। এতো কিছু করেও তিনি তৃপ্ত ছিলেননা। সারাদিনের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে বাবলু নিজের পরিবারকে সময় না দিয়ে ব্যাস্ত থেকেছেন তার লেখালেখি আর গবেষণা নিয়ে। প্রবাসে বেড়ে উঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে তার ভাবনার অন্ত ছিলো না। তার ভয় ছিল ইউরোপীয় সংস্কৃতির চাপে শিশুরা শেকড় ভুলে যাবে। এমনকি মাতৃভাষা থেকেও তারা দুরে সরে যাবে। এই আশংকা থেকে তিনি বোলজানোয় নজরুল বাংলা বিদ্যাপিঠ নামে একটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটি বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে, পুলিশের দপ্তরে যেতেন ভাষা ট্রান্সলেট করার জন্য। সে সব জায়গায় গিয়ে তিনি দেখেছেন ইতালিতে প্রবাসী বহু বাংলাদেশি মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে। এসব দেখে তি
নি নিজের মধ্যে এক প্রকারের তাগিদ বোধ করেন। খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন সড়ক দূর্ঘটনায় এতো মানুষের মৃত্যুর কারণ কি? তিনি জানতে পারেন, কঠিন হওয়ার কারণে তখন কোনো বাংলাদেশি ইতালিয়ান ড্রাইভিং স্কুলে যেতো না। তারা বাংলাদেশ থেকে লাইসেন্স কিনে এনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে পরিবর্তন করে নিতো। উল্লেখ্য, সে সময়ে ইতালিতে বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরিবর্তন করে দেয়ার আইন ছিলো। যা পরে বাতিল করা হয়েছে। আইন কানুন না জেনে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই দূর্ঘটনার মুখে পড়তো বাংলাদেশিরা। বিষয়টি বাবলুকে প্রভাবিত করে। তিনি বাংলা ভাষায় ইতালিয়ান ড্রাইভিং বই লেখার কাজ শুরু করেন। শুরুতে বিষয়টিকে যতোটা সহজ ভেবেছিলেন কাজ করতে গিয়ে দেখেন অনেক কঠিন। তখন তিনি আবার গোড়া থেকে ইতালিয় ড্রাইভিং আইন এবং সড়ক আইনের উপর পড়াশুনা শুরু করেন। টানা এক বছর পড়াশুনা করে আবার ফিরে আসেন লিখার টেবিলে। দীর্ঘ সাধনা করে অবশেষে তিনি লিখে ফেলেন ইতালিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স এবি নামের একটি বই। বই লিখার কাজ শেষ হলেও সামনে এসে দাঁড়ায় আরেক নতুন সমস্যা। কোনো ভাবেই প্রকাশক যোগাড় করতে পারছিলেন না তিনি। নিজের টাকা দিয়ে ছাপানো মতো আর্থিক অবস্থাও ছিলো না তার। তিনি হাল ছাড়েন নি। লেগে থেকেছেন। প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছেন। কোনো ভাবেই যখন বাবলু কিছু করতে পারছিলেন না তখন তার কয়েক জন ইতালিয়ান বন্ধু তার পাশে এসে দাড়ায়। তারা বাবলু এবং তার লেখা পান্ডুলিপি নিয়ে একটি প্রেস কনফারেন্স করে। তারা ওই বইয়ের গুরুত্ব এবং আবেদন তুলে ধরে প্রেসের সামনে। এরপর বাবলুকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ইতালির অন্যতম প্রধান প্রকাশনা সংস্থা ‘আতেছিয়া’ এগিয়ে আসে বইটি ছাপাতে। তারা লেখক বাবলুর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। শুরু হয় পুরোদমে বই প্রকাশের কাজ। সেখানেও বাবলুর জন্য অপেক্ষা করছিলো বিপত্তি। তখন ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কম্পিউটার জানা মানুষের সংখ্যা ছিলো হাতে গোনা কয়েক জন। তাদের দিয়ে ওই বইয়ের কাজ সম্ভব হচ্ছিলো না। প্রকাশকের পরামর্শে বাধ্য হয়ে বাবলু তার পান্ডলিপি ঢাকায় পাঠান কম্পোজ, প্রæফ এবং মেকআপের জন্য। প্রথমে তিনি তার এক সেলিব্রেটি বন্ধুর কাছে পান্ডুলিপিটা পাঠান। অনেক সময় নিয়েও তিনি প্রকাশকের চাহিদা মতো কাজটি করে দিতে পারছিলেন না। বাবলু বাধ্য হন সেখান থেকে পান্ডলিপি ফেরত আনতে। এবার তিনি যার দ্বারস্থ হন তিনি
লিখনীর সম্পাদক শাহ্ ইফতেখার তারিক। শাহ্ ইফতেখার তারিক যে শুধু একজন সম্পাদকই নন, একজন ভালো চারু (গ্রাফিক) শিল্পীও তা আমি জেনেছি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে এই বইটি পড়ার পর। লেখক বাবলুর এই চরম কষ্টের ফল ছুয়ে যায় ইতালিতে প্রবাসী সকল বাংলাদেশিদের মন। মানুষ এই বই পড়ে মনে সাহস পায়। ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়, পরীক্ষা দেয়। পাশ করে গাড়ী চালায়। জীবন হয়ে উঠে আরো গতিশীল। আমি মনে করি এই গতির পেছনে সব টুকু সফলতা লেখক বাবলুর। তিনি যদি সেদিন কষ্ট করে ওই কাজটি না করতেন, তবে আজ আমরা বাংলাদেশিরা ইতালিতে আরো বেশি পিছিয়ে থাকতাম। বাবলুর ইতালিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স এবি বইটার প্রথম সংস্করণ আমাদের কমিউনিটিতে মুড়ির মতো বিক্রী হয়েছে। এখন বাজারে রয়েছে এর দ্বিতীয় সংস্করণ। তাও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। শেখ মহিতুর রহমান বাবলু আজ ইতালিতে নেই। কেন তিনি চলে গেছেন ইংল্যান্ডে? এর কোনো উত্তর আমার জানা নেই। শুধু এটুকুই বলতে পারি, তাকে ধরে রাখার মতো আনুকুল্য আমরা দিতে পারিনি। যদ্দুর জানি লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত চ্যানেল আই’তে তিনি ইভেন্ট ম্যানেজার হিসাবে জয়েন্ট করেছেন। শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ইতালিতে না থাকলেও তার সৃষ্টি আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। তার কষ্টের ফল ভোগ করছে গোটা কমিউনিটি।
আগামীতেও করবে। এখনো ইতালির পাঠকরা স্বদেশ বিদেশের পাতায় ‘খেয়াঘাট’ কলামটা খোঁজে। জনপ্রিয় ওই কলামটি লিখতেন বাবলু। তাকে পাঠকরা খুজবে আরো অনেক দিন। হয়তে এক সময় এই খোঁজাখুঁজি বন্ধ হবে। কিন্তু বাবলু কখনোই হারিয়ে যাবেন না। তখন তাকে খোঁজা হবে অন্য আঙ্গিকে। আমাদের কমিউনিটির যেসব ছেলে মেয়েরা এখন ইতালির কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা এক সময় বড় হবে। এদের কেউ কেউ কমিউনিটির অতীত নিয়ে গবেষণা করবে। তখন আবার সামনে চলে আসবে বাবলুদের নাম। যাদের অবদানে আজ ইতালীর বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান অনেক উর্ধ্বে। তার এবং তাদের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।