শেখ মহিতুর রহমান বাবলু : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যসব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের মত বাংলাদেশেও ক্রিকেটের শুরু সাদা চামড়ার ইংরেজদের হাত ধরে। এখানে কর্মরত ব্রিটিশদের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে ক্রিকেটের প্রসার ঘটে। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা (বেঙ্গল) বলতে অবিভক্ত বাংলাকে বোঝায়। এই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম ক্রিকেট খেলা চালু হয়েছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে।
এই অবস্থার চিত্র বদলাতে শুরু করে ১৮৭০ সালের দিকে, তখন এখানে পাকা রাস্তা, কিছু বড় বড় বিল্ডিং এবং খেলার মাঠ তৈরী হয় ,মূলত ঘোড়া দৌড়ের জন্য। ইউরোপিয়ানরা ঢাকায় স্থায়ী হতে শুরু করে। ঢাকায় খেলা প্রথম ক্রিকেট ১৮৭৬ সালে, ইউরোপিয়ান একাদশ বনাম ঢাকা (ডাক্কা) একাদশ।
আজ বাংলাদেশিদের রক্তের সাথে মিশে গেছে ক্রিকেট। একসময় দেশে ফুটবল ছিল সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে ।এর পর থেকে বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন একটি আবেগ, জাতীয় আবেগ৷ বাংলাদেশ দলের কোনো খেলা থাকলে দেশের মানুষ যেন সব ভুলে যায়, পরিণত হয় ক্রিকেট পাগলে৷ একসময় ফুটবল নিয়ে মতামাতি ছিল, কিন্তু ক্রিকেট জ্বর অনেক আগেই তাকে হারিয়ে দিয়েছে৷ আমাদের ক্রিকেটের এই ভালোবাসা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশী সেখানেই আজ আয়োজন করা হচ্ছে দেশী বিদেশীদের নিয়ে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এতে দেশের সাথে প্রবাসীদের সম্পর্কের সেতুবন্ধন হচ্ছে। তাছাড়া প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশীয় ঐতিহ্য চর্চার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে নতুন প্রজন্মের মাঝে মাদকাসক্তদের পরিমান।
দেশের বাইরে যেখানে বাংলাদেশী সেখানেই ক্রিকেট। এটা যেন একটা জাতীয় ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে । তবে আমার জানা মতে দেশের বাইরে সাগর পাড়ের লন্ডনেই ক্রিকেট চর্চা হয় সবচাইতে বেশি। এখানে বিভিন্ন ক্লাব গ্রীষ্মে আউটডোর ও শীতে ইনডোর ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে । এদের মধ্যে লন্ডন ক্রিকেট লীগ ( এল সি এল ) উল্লেখযোগ্য।
বিলেতের বাংলা মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে ইউরোপে প্রথমবারের মতো গত ৮ জুন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইউকে বাংলা টি ১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এর প্রধান উদ্দ্যাক্তা ছিলেন সবার পরিচিত মুখ ,স্পোর্টস মাফিয়া বলে খ্যাত জাকির খান। লিগটির সার্বিক ব্যাবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন লন্ডন ক্রিকেট লীগ ( এল সি এল ) ক্যানারিওয়ার্ফের আর্থিক সহযোগিতায় আটটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে এ টি এন বাংলা ইউরোপ একাদশ ,রানারআপ বেতার বাংলা একাদশ।খেলা শেষে আয়োজকদের পক্ষে ক্যানারিওয়ার্ফের জাকির খান, শহীদুল আলম রতন, এল সি এল এর সভাপতি আবু সুফিয়ান ঝিলাম , সাধারণসম্পাদক নাহিদ নেওয়াজ রানা, জেএমজি কার্গোর এমডি মনির আহমদ, এটিএন বাংলার ডায়রেক্টর সুফি মিয়া, বেতার বাংলার সিইও নাজিম চৌধুরী,মোস্তাক আলী বাবুল টুর্নামেন্টের বিজয়ী ও রানার্সআপ দল, ম্যান অবদ্যা ফাইনাল ফোহাদ, সেরা বলার ফোহাদ, সেরা ব্যাটসম্যান সোহাগ এবং ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট সোহাগকে পুরস্কার তুলেদেন। ভালো খেলার জন্য ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট সোহাগকে বাংলাদেশের রির্টান বিমান টিকেট জেএমজি এয়ারকার্গোর পক্ষে প্রদান করা হয়।এসময় জাকির খান বলেন প্রত্যেক টিমে কিছু ভালো ক্রিকেটার আছে। এদের নিয়ে তিনি ইউ কে মিডিয়া টিম গঠনের প্রস্তাব দেন। এদিকে ইউ কে বাংলাদেশী ক্ৰিকেট জগতের আর এক নক্ষত্র শহীদুল আলম রতন বলেন শীতে ইনডোর ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করলে তিনি টুর্নামেন্টের সম্পূর্ণ খরজ স্পনসর করবেন। অনেকের মতে প্রথমবারের মত মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে কিছু কিছু বাংলা মিডিয়ার ভূমিকা ছিল হতাশাজনক।
আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোনো ভালো খবর পুরো জাতিকে যেমন উদ্বেলিত করে, তেমনি কোনো খারাপ খবরে মুষড়ে পড়েন দেশের মানুষ৷ দেশের প্রতিটি শিশুই আজ বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হতে চায়, হতে চায় সাকিব, তামিম ,মাশরাফি, মুশফিক ৷ এই আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগা – যা ক্রিকেটের জন্য, তা নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ল কী? স্বপ্নটা অনেক বড়৷ স্বপ্নটা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস আছে, আছে প্রশংসাবাক্য৷ এই উচ্ছ্বাস এবং প্রশংসাবাক্য সাবেক ও বর্তমান বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারদের৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের চার বিস্ময় তামিম ইকবাল ,মুশফিকুর রাহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান৷ আইপিএল-এ এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অপরিহার্য৷ তাই আগামীতে বিশ্বকাপের স্বপ্ন তো বাংলাদেশ দেখতেই পারে৷ কিন্তু সামনে অনেক প্রতিবন্ধকতা। আমরা পদে পদে ষড়যন্ত্রের শিকার।
টাকারই ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ আছে, আছে ষড়যন্ত্রের কথা৷ এর আগেও বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে বাজে ও পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে, যার সবগুলো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় ভারতের পক্ষে। এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত কারা তাও দেশবাসী জানে।তাসকিন ষড়যন্ত্রের শিকার৷ লিটন কুমার দাশ ষড়যন্ত্রের শিকার।ষড়যন্ত্রের শিকার দেশ ,জাতী ও বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল । বাংলাদেশে ক্রিকেটকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র আছে তা হলো ক্রিকেট অর্থনীতির ষড়যন্ত্র৷ সেই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কি আটকে দিতে পেরেছে ?
ষড়যন্ত্র তো হচ্ছেই৷ তা না হলে তাসকিনকে ঐ সময়ে কেন আটকে দেয়া হবে? এটা অন্য সময়য়েও তো করা যেত৷ ঐ মুহূর্তে আমরা তো আর নতুন করে আরেকজন তাসকিনকে ‘রিপ্লেস’ করতে পারিনি৷
ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। কিন্তু ভারত যেন বারবরই তার ব্যতিক্রম! ভারতের ম্যাচে সমালোচনা ও বিতর্ক থাকবেই। সম্প্রতি এশিয়া কাপের ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। টুর্নামেন্টের ১৪তম আসরের ফাইনালে বিতর্ক ছড়িয়েছে একটি স্টাম্পিং, যার শিকার বাংলাদেশের ওপেনার লিটন কুমার দাস।
ইনিংসের ৪১তম ওভারের ঘটনা। কুলদীপ যাদবের প্রথম পাঁচ বল থেকে ১০ রান তুলে নেন লিটন দাস। কিন্তু শেষ বলটি পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়েও ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে। আর লিটনের পেছনের পা বেরিয়ে আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত বেলস ফেলে দেন ধোনি।
ভারতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করা হয় থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য। আপিল করা হলে বেশ কয়েকবার স্টাম্পিংয়ের মুহূর্তটি দেখেন থার্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা রড টাকার। সব বিশ্লেষণেই দেখা যায়, স্টাম্প ভাঙার আগেই লিটনের পা লাইন স্পর্শ করে। এমনকি তার পা মাটিতেই ছিল।
এরপর লিটনের পায়ের অবস্থান ম্যাগনেটিক গ্লাস দিয়েও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এমনকি স্টাম্প ক্যামেরা দিয়ে দেখানো হয়। সেখানেও স্পষ্ট দেখা গেল, লিটনের পা লাইন স্পর্শ করার পরই স্টাম্প ভেঙে দেন ধোনি। ওদিকে টেলিভিশনের ধারাভাষ্যে বারবারই মুহূর্তটিকে ক্লোজ বলা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল বেনিফিট অব ডাউট, ক্রিকেটীয় আইনে যেটা সবসময় ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়।
কিন্তু সব নিয়মের ঊর্ধ্বে গিয়ে লিটনের আউট ঘোষণা করেন অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার রড টাকার। আর থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে স্টাম্পড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা লিটন।দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশি সমর্থক সহ গোটা দুনিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন স্কোরকার্ডের পাশে থাকা জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে।পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেওয়ার নজির রড টাকারের জন্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও অনেকবার একই অভিযোগে বেশ কয়েকবার তিরস্কৃত হয়েছেন তিনি।
তবে এ সব সামনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷সব ধরণের ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে জয় করে দেখাতে হবে বিশ্ব কাপ।এটাই আমাদের স্বপ্ন ,এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Published :02.10.2018 Newslife24.com
Writer : Editor, Newslife24.com