শেখ মহিতুর রহমান বাবলু :: সাগর পাড়ের লন্ডনে এসে লেখালেখি থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছি। ঝুঁকে পড়েছি টিভি প্রোগ্রামের দিকে। পাঠক ও বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে লেখার তাগেদা আসে প্রায়ই। কিন্তু সময় ও সুযোগের সাথে সমন্বয় করে লেখার টেবিলে খুব একটা বসা হয় না।
বিলেতে আসার পর থেকে যে কয়েকজন মানুষকে কমিউনিটির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে দেখেছি তাদেরই একজন সৈয়দ আনাস পাসা।ইতিহাসের পাতা নড়াচড়া করে দেখা যায় ১৮১৬ সালে দেশের বাইরে প্রথম বাংলা মিডিয়ার পথচলা শুরু হয় এই ব্রিটেনে। এক ঝাঁক গুণী ও নিবেদিত মানুষের হাত ধরে। তখন যে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো তার নাম ছিল “সত্যবাণী”। চলতি সালের ফেব্রুয়ারী মাসের গোড়ার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানতে পারি বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ উদযাপন ও “সত্যবাণী” নামের একটি অনলাইন পত্রিকার শুভ যাত্রা শুরু হবে ২১ ফেব্রুয়ারী এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান ও গালা ডিনারের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক সৈয়দ আনাস পাসা। শতবর্ষ আগের বাংলা মিডিয়াকে শতবর্ষ পরের প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়াই হবে তার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
সৈয়দ পাশা ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা ও সত্যবাণীর জন্য একটা লেখা দিতে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলেন । লেখা দেবার পাশাপাশি শাপলা সিটি লিঃ এর পক্ষ থেকে আমি একটা স্পনসারের ব্যবস্থা করেছিলাম ।
’’প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী এলেই গাছে গাছে লাল পলাশ ফোটে। ফাল্গুনের হু হু করে বয়ে যাওয়া দখিনা মলয় যেন ছুয়ে যায় বাঙ্গালীর বাঙ্গালীত্বকে। নিজেকে নতুন করে চিনে নেয়ার শক্তি যোগায়। আর ২০ তারিখ ঘড়ির কাটা যখন মধ্যরাতে অতিক্রমের ঘোষনা দেয় ঠিক তখনই সব পথ গন্তব্য খোজে শহীদ মিনারের দিকে। সব কন্ঠে শব্দায়িত হয় “ আমার ভাইযের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি....... । একটি দুটি করে অগনিত স্তবক নিবেদিত হয় শহীদ বেদিতে।
১৯৫২ সালের ভাসা আন্দোরনের কণ্টকাকীর্ণ পথ ধরে বিজয় আসে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টে । এরপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশীদের চুড়ান্ত বিজয় ১৯৭১ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারী অর্জন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকোর উদ্যোগে পালিত হবার কথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । কিন্তু বিশ্বের প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ মাতৃভাষা থাকলেও ভ্যালেনটাইন ডে বা এধরনের পশ্চিমাদের উদ্যোগে স্বীকৃত দিন গুলির মতো আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের ছোঁয়া আজও পৌঁছায়নি বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ঘরে। সুতরাং প্রবাসে আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ব্যক্তিগত, সামাজিক,সাংগঠনিক ও ঐদেশের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের শপথ গ্রহন করতে হবে আজ ।
ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে পৃথিবীতে এমন জাতি দ্বিতীয়টি নেই। যে কারণে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে জাতিসংঘ থেকে । দূঃখজনক হলেও সত্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলার কোন তারিখ ছিল রাষ্ট্রিয়ভাবে তা প্রকাশ করা হয় না কখনই। দেশ স্বাধীনের পর এমন উদ্যোগ কোন সরকারই গ্রহন করেনি। এটা বড়ই বেদনাদায়ক । দেশের উঁচু স্তরের আতেলরা যাদেরকে আমরা শুশীল সমাজ বলে সম্মান করি। যারা ফেব্রুয়ারী এলেই ভাষার জন্য জান দেবার ভাব ধরে । তারা ভুলেও তাদের বক্তৃতা বিকৃতিকে একবারের জন্যেও বলেন না ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রক্তঝরা ঐ দিনটি ছিল বাংলা ১৩৫৮ সালের ৮ই ফাল্গুন । ইংরেজী আজ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। আমি ২১ ফেব্রুয়ারির বিরোধিতা করছি না। তবে যে ভাষার জন্য আজ এত বড় স্বীকৃত ঐ বাংলার সন তারিখ ব্যবহৃত হবে না এটা কি হয় ? শতবছর পরে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম যদি না জানে ‘৫২র ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন সালের কোন মাসের কোন তারিখ ছিল তাহলে তারা বাংলাদেশী জাতি হিসাবে পরিচিতি দিবে কিভাবে। এ ব্যর্থতার দারভারই বা কাঁধে নেবে কে ?